পর্যটনে বিকাশ চান মুখ্যমন্ত্রী

পর্যটনের বিকাশের জন্য তিনি জঙ্গলমহলের তিন জেলাকে ঘিরে তাঁর অন্যতম একটি স্বপ্নের প্রকল্পের কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঝিলিমিলিরও উন্নয়ন করব।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

মুকুটমণিপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২০
Share:

ভিড়: ঠাঁই হয়নি সভাস্থলে। মমতাকে দেখতে ছোট টিলার উপরে তাই জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

ভিড়ে ঠাসা মুকুটমণিপুরের দেদুয়ার প্রশাসনিক জনসভা দেখে বৃহস্পতিবার আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন কল্পতরু হয়ে উঠলেন। পরিবর্তনের পরে জেলা জুড়ে একের পর উন্নয়নমূলক কাজের তালিকা ধরে যেমন পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন, অন্য দিকে, তেমনই বেশ কিছু নতুন প্রকল্পও ঘোষণা করলেন তিনি।

Advertisement

পর্যটনে গুরুত্ব

তাঁর সরকারের আমলে জঙ্গলমহলের পর্যটন প্রসারের অনেক কাজ হয়েছে। গত বছর ২০১৬ সালে মুকুটমণিপুরে এসে তাই এলাকার উন্নয়নের জন্য মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট কমিটি গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারের সফরে এসে ওই কমিটির সার্বিক কাজের প্রশাংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, “মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ভাল কাজ করছে। এ জন্য আমি মহকুমাশাসক, বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি থেকে জেলাশাসককে অভিনন্দন জানাব। আগের থেকে এখনকার মুকুটমণিপুরের কত পার্থক্য, দেখুন। আমরা আরও উন্নয়ন করব।’’

Advertisement

পর্যটনের বিকাশের জন্য তিনি জঙ্গলমহলের তিন জেলাকে ঘিরে তাঁর অন্যতম একটি স্বপ্নের প্রকল্পের কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঝিলিমিলিরও উন্নয়ন করব। ঝাড়গ্রাম থেকে ঝিলিমিলি, সেখান থেকে মুকুটমণিপুর, বিষ্ণুপুর, শুশুনিয়া থেকে অযোধ্যাপাহাড় নিয়ে ট্যুরিজম সার্কিট করব। তাতে অনেক লোক এখানে আসবেন। তাহলে এখানকার উন্নয়নও হবে।’’

তিনি পর্যটনস্থানগুলির বাসিন্দাদের আর্থিক বিকাশের দিকেও নজর দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে হোম ট্যুরিজম চালু করতে হবে। ডিএম-কে বলব, পর্যটন দফতরের সঙ্গে কথা বলে হোম ট্যুরিজমকে ডেভেলপ করতে হবে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়িতে আমরা করেছি। সব জায়গায় আমরা করতে চাই।’’ হোম ট্যুরিজম কী বোঝাতে তিনি জনতাকে জানান, গ্রামের লোকের মাটির বাড়িতে সরকার বায়ো টয়োলেট করে দেবে। শুধু একটা ঘর সাজাতে হবে। সেখানে বাইরে লোক এসে খরচা দিয়ে থাকবেন। গৃহস্থই পর্যটকদের রান্না করে দেবেন। সে জন্য তাঁরা খরচ দেবেন। সেই টাকায় সংসারের উন্নয়ন হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, যতগুলো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, সেখানেই সরকার হোম ট্যুরিজম চালু করতে চায়।

সঙ্কটমোচনে

পানীয় জলের সমস্যা বাঁকুড়ায় দীর্ঘদিনের। ইতিমধ্যেই ১১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে জেলার ব্লকগুলিতে। বেশ কিছু ব্লক ওই প্রকল্পের জল পাচ্ছে।

আগামী মার্চের মধ্যেই ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে এ দিন মমতা জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ফের ১২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বাঁকুড়ার জন্য। বাঁকুড়ার ১৮ লক্ষ লোক এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।’’ বুধবার তিনি জেলায় থাকাকালীন এই প্রকল্পের টেন্ডারও ডাকা হয়ে গিয়েছে।

তিনি জানান, ৩০ শয্যার রাইপুর গ্রামীণ হাসপাতালকে ১০০ শয্যার করা হয়েছে। খাতড়া মহকুমা হাসপাতালকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সেখানে আগেই ব্লাডব্যাঙ্ক চালু করেছি। ন্যায্য মূল্যে ওষুধের দোকান চালু করেছি। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে।’’ মাতৃযান প্রকল্পে বাঁকুড়া জেলাকে আরও ৩২টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা প্রায় সাতশো কোটি টাকা খাতড়ার বিভিন্ন ডেভলপমেন্টের জন্য জলের প্রোজেক্টে দিয়েছি। খাতড়া ডিভিশনে ইতিমধ্যেই ১৭০ কোটি টাকার কাজ কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। আরও সতেরোটা নতুন প্রোজেক্ট নেওয়া হচ্ছে। ৮৫ কোটি টাকার। জলের প্রোগ্রাম মার্চ মাসে অনেকটা হয়ে যাবে।’’

মমতা জানান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া ও হুগলি জেলায় ৫০০ কোটি টাকার চেকড্যাম সংস্কারের কাজ নেওয়া হয়েছে। বন্যারোধে ও সেচের সুবিধার জন্য ২,৫৬৮ কোটি টাকার একটা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। তাতে বড়জোড়া, সোনামুখী, পাত্রসায়র, ইন্দাস এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন।

নজর আছে

উন্নয়ন কেমন হচ্ছে তা নিজের চোখে দেখতেই বার বার জেলায় তিনি আসেন বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি কেন বারবার আসি? আগে তো কেউ আসত না। আমি প্রতি বছরে একবার নয়, বারবার আসি, কারণ আমি নিজের চোখে দেখি কোথায় কী সমস্যা রয়েছে?’’

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘‘বাঁকুড়া থেকে মুকুটমণিপুর আসার পথে দেখলাম রাস্তাটা ভাল, তবে মাঝে দু’কিমি রাস্তা খারাপ। সঙ্গে সঙ্গে বলেছি, ওটা সারাতে হবে। এটা আমার কাজ। আমি রাস্তায় আসার সময় যতটা পারি মানুষদের কথা শোনার চেষ্টা করি।’’

এই প্রসঙ্গেই তিনি জানান, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরে বাঁকুড়া জেলা এখনও পর্যন্ত গড়ে ৪৪ দিন করে প্রতিটি পরিবারকে কাজ দিতে পেরেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ নির্দেশ সবাইকে সমান কাজ দিতে হবে। কেউ কাজ কম পাচ্ছেন এমন অভিযোগ যাতে কোনও ভাবেই না ওঠে সে বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে অঞ্চল সভাপতি থেকে জনপ্রতিনিধি সকলকেই নজর রাখতে বলেছেন। তিনি ফের ফেব্রুয়ারিতে এসে জেলার কাজের মূল্যায়ণ করবেন বলে জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement