তৃণমূলের প্রার্থী হলেন মৎস্যমন্ত্রীর স্ত্রী

নাম বাদ গেল চন্দ্রনাথের

বিপুল ভোটে জিতে পুরপ্রধান হয়েছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েও কাউন্সিলর পদ ছাড়েননি। বিস্তর আলোচনার শেষে এ বারও তাঁর নাম রেখেই দল প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু, তার ঠিক দু’দিন পরেই বোলপুর পুরসভার প্রার্থী হিসেবে নাম বাদ গেল রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের। কোনও ঘোষণা ছাড়াই বুধবার দুপুরে বরাদ্দ আসনটিতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেখা গেল মন্ত্রীরই স্ত্রী কুন্তলা সিংহকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০২:২৫
Share:

বিপুল ভোটে জিতে পুরপ্রধান হয়েছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েও কাউন্সিলর পদ ছাড়েননি। বিস্তর আলোচনার শেষে এ বারও তাঁর নাম রেখেই দল প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু, তার ঠিক দু’দিন পরেই বোলপুর পুরসভার প্রার্থী হিসেবে নাম বাদ গেল রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের। কোনও ঘোষণা ছাড়াই বুধবার দুপুরে বরাদ্দ আসনটিতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেখা গেল মন্ত্রীরই স্ত্রী কুন্তলা সিংহকে। আর তার পরেই বিরোধী দলগুলি কটাক্ষ শুরু করেছে, হার নিশ্চিত বুঝতে পেরেই ভোল পাল্টালেন মন্ত্রী। রাজ্যের মন্ত্রীর পুরভোটে হেরে যাওয়ার অস্বস্তি এড়াতে তাই চন্দ্রনাথবাবুর নাম তুলে নেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেছে রাজ্যের শাসকদল! তৃণমূল নেতৃত্ব যদিও ওই দাবিকে উড়িয়েই দিয়েছেন।

Advertisement

বোলপুরে গত পুরভোটের দল ভিত্তিক ফল ছিল তৃণমূল ৯, কংগ্রেস ৮ এবং বামফ্রন্ট ২। দল বদলের ফলে বিদায়ী বোর্ডে তৃণমূলের কাউন্সিলর দাঁড়িয়েছিল ১৬ জনে। কিন্তু, গত বছর লোকসভা ভোটের ফলের হিসেবে পুরসভার ২০টির মধ্যে বিজেপি ৮টি ওয়ার্ডে এগিয়ে যায়। ব্যবধান কমে গেলেও ১১টি ওয়ার্ড কোনও রকমে ধরে রাখে তৃণমূল। বিদায়ী বোর্ডে চন্দ্রনাথবাবু ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। ওয়ার্ডটি এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় দল মন্ত্রীকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর ছিলেন তাঁরই স্ত্রী। কিন্তু, গত রবিবার বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয় থেকে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দলের যে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেন, তাতে কুন্তলাদেবীর নামই ছিল না। বুধবার দেখা যায় বোলপুর মহকুমাশাসকের দফতরে মিছিল করে স্ত্রীকে নিয়ে আসছেন মন্ত্রী। জানা গেল, চন্দ্রনাথবাবু নন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ফের কুন্তলাদেবীকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল!

ঘটনা হল, লোকসভা ভোটের ফলের হিসেবে এই দু’টি ওয়ার্ডের একটিতে তৃণমূল মাত্র তিনশো এবং অন্যটিতে চারশো মতো ভোটে বিজেপি-র থেকে এগিয়ে ছিল। আর সে দিকে খেয়াল করিয়েই বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি তথা বোলপুর পুরভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দিলীপ ঘোষ বলছেন, “আমরা একটুও অবাক হইনি। এটা ঘটারই ছিল। মন্ত্রীমশাই হেরে গেলে তৃণমূলের কি কোনও সম্মান থাকত? পুরভোটে জিততে পারবেন না বুঝেই শেষ মুহূর্তে চন্দ্রনাথবাবুকে দল প্রার্থীতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। কারণ, যিনি কাউন্সিলর হিসেবেই জিততে পারেন না, তিনি কীভাবে মন্ত্রী থাকবেন এই প্রশ্ন তো উঠতই!”

Advertisement

শেষমেশ দেখা গেল, দল যাঁর নাম তালিকায় রাখেনি, তিনি পেয়ে গেলেন প্রার্থীপদ। আর তালিকায় যাঁর নাম ছিল, তিনিই পড়ে গেলেন বাদ! প্রার্থীতালিকা ঘোষণার দু’দিনের মধ্যে কী এমন হল, যার জন্য এই পরিণতি? এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি অনুব্রত। অন্য দিকে, মন্ত্রীর যুক্তি, “ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আমার স্ত্রী-কেই ফের কাউন্সিলর হিসেবে চাইছেন, তাই দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” ঘটনা হল, প্রার্থীতালিকা ঘোষণার দিন তাঁর পুরভোটে দাঁড়ানো নিয়েও একই যুক্তি দেখিয়েছিলেন চন্দ্রনাথবাবু! সে দিনও তাঁর বক্তব্য ছিল, মন্ত্রী হলেও এলাকার মানুষের চাহিদা মেনে তিনি পুরসভায় লড়তে রাজি হয়েছেন। তা হলে, কেন এই ডিগবাজি? এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি চন্দ্রনাথবাবু। তিনি শুধু বলেন, “প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পরে এলাকার বাসিন্দারা বিদায়ী কাউন্সিলরকেই চাইলেন। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মা-মাটি-মানুষ চাইছে, দল চাইছে, তাই কুন্তলা সিংহই প্রার্থী হয়েছেন।”

যদিও বিরোধীরা তো বটেই, এমনকী জেলা তৃণমূলের একাংশও মন্ত্রীর এই যুক্তি মানতে নারাজ। উল্টে তাঁদের ব্যাখ্যা, রাজ্য নেতৃত্ব মন্ত্রীদের পুরভোটে প্রার্থী না হওয়ার ব্যাপারেই বার্তা দিয়েছিল। যার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী নিজের প্রচার শুরু করেও শেষমেশ প্রার্থী হননি। তাঁর বদলে মন্ত্রীর স্ত্রীকেই প্রার্থী করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও চন্দ্রনাথবাবুর পুরভোটে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বের আপত্তি ছিল বলেই দলের ওই সূত্রের দাবি। তার জন্যই ঘোষণার পরেও চন্দ্রনাথবাবুর নাম ফিরিয়ে নিতে হয়েছে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন। যদিও ঘটনা হল, এই ব্যাখ্যা অংশত ঠিক নয়। কারণ, বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বিষ্ণুপুর পুরসভায় এ বারও দলের প্রার্থী হয়েছেন। তাই দলেরই অন্য একটি অংশের দাবি, “আসলে গোটাটাই নাটক। মন্ত্রী কখনই প্রার্থী হতেন না। কারণ, সে ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই তাঁকে ‘শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদে’র (লাভজনক সংস্থা) চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে হতো। স্ত্রীকে নিয়ে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব এড়াতেই মন্ত্রী এই চাল দিয়েছেন।”

বিরোধীরা অবশ্য এই সব যুক্তি মানতে নারাজ। দিলীপবাবুর সুরেই কংগ্রেসের বোলপুর ব্লক সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন দাবি করছেন, “আসলে পরের ভোটেই তৃণমূল সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মন্ত্রিত্ব চলে যাবে, সেই আশঙ্কা থেকেই চন্দ্রনাথবাবু বোধহয় চেয়েছিলেন, অন্তত পুরসভায় ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ সুনিশ্চিত হোক। কিন্তু, দু’দিনেই এলাকার বাস্তব পরিস্থিতিটা তিনি বুঝতে পেরেছেন। তাই সম্মান বাঁচাতেই সরে দাঁড়ালেন!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement