নিতুড়িয়ার সড়বড়ি গ্রামে শনিবার সিবিআইয়ের দল। —নিজস্ব চিত্র।
নোটিস পেয়েও কয়লা পাচারের তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার সড়বড়ি গ্রামের জমি কারবারি সৈকত দে। তাই শনিবার সড়বড়িতে সৈকতের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মাকে ঘণ্টা তিনেক জিজ্ঞাসাবাদ করলেন সিবিআই-এর আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার গ্রামে এসে সৈকতের ব্যবসার লেনদেনে যুক্ত সুপ্রদীপ মণ্ডলকে তদন্তের স্বার্থে আটক করেছিল সিবিআই। এ দিন অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার একযোগে নিতুড়িয়ার সড়বড়ি ও বীরভূমের কালীপুরে সৈকতের দুই ঠিকানায় অভিযান চালায় সিবিআই। সড়বড়িতে তাঁকে বাড়িতে না পেয়ে যে ঘরে সৈকত থাকেন, সেটি তালা দিয়ে সিল করে দিয়েছিল। অন্যদিকে, কালীপুরের বাড়িতে সৈকতের মা সুনন্দার হাতে তাঁর ছেলেকে শুক্রবার আসানসোলে সিবিআইয়ের অস্থায়ী অফিসে হাজিরা দেওয়ার নোটিস দিয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সূত্রের দাবি, সৈকত দেখা করতে যাননি।শুক্রবার রাতে কালীপুর থেকে সড়বড়ির বাড়িতে ফিরে আসেন সুনন্দা।
এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সিবিআইয়ের পাঁচ সদস্যের একটি দল এসে পৌঁছয় সৈকতের বাড়িতে। সূত্রের দাবি, সেখানে সৈকতকে না পেয়ে তাঁরা ঘণ্টা তিনেক ধরে সুনন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
সিবিআইয়ের দলটি বেরিয়ে যেতেই বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করে দেন সৈকতের পরিজনেরা। ফলে তাঁদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কিন্তু দু’দিনের মাথায় ফের সিবিআইয়ের অভিযান ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে এলাকায়। সূত্রের খবর, কয়লা পাচারের টাকার একাংশ নিতুড়িয়া এলাকায় জমি কেনাবেচায় বিনিয়োগ হয়েছে। এই মর্মে তথ্য পেয়েই জমির কারবারি সৈকতের বাড়িতে অভিযান চালায় সিবিআই।
তাহলে কি কয়লা পাচার কাণ্ডের টাকার কিছুটা নিতুড়িয়া এলাকায় জমি কেনাবেচায় বিনিয়োগ হয়েছে? সেই বিনিয়োগ কি হয়েছে সৈকতের মাধ্যমেই? কারা জমিতে বিনিয়োগ করেছেন? এই সব প্রশ্ন সিবিআইয়ের দলটিকে করা হলেও তারা এড়িয়ে গিয়েছে। তাঁরা শুধু জানান, বৃহস্পতিবার সৈকতের যে ঘরটি তালা দিয়ে ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছিল, সেটি এ দিন খুলে দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার সৈকতের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত সড়বড়ির বাসিন্দা সুপ্রদীপ মণ্ডলকে তদন্তের স্বার্থে আটক করেছিল সিবিআই। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সুপ্রদীপ সৈকতের সঙ্গেই জমি কেনাবেচার কাজ করতেন। এ দিন বাড়িতে ফেরেন সুপ্রদীপ।
তাঁর দাবি, আসানসোলের সোদপুরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই-এর আধিকারিকেরা।
সুপ্রদীপ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা বিশেষ ভাবে সৈকতের জমি সংক্রান্ত কাজকর্মের বিষয়েই জানতে চেয়েছিলেন।কোথায় জমিতে সৈকত লগ্নি করেছেন, সেই তথ্য জানতে চান। আমার সঙ্গে সৈকতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক খুব বেশি কিছু নেই। মাঝে মধ্যে কারও কাছ থেকে টাকা আনতে বলত, কেউ সৈকতকে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে যেতেন। শুধুমাত্র সেটুকুই কাজই করেছি। এই সমস্ত তথ্যই জানিয়েছি সিবিআইকে।’’