রান্না চলছে দিদির হেঁশেলে। নিজস্ব চিত্র।
মহিলাদের কাঁধেই থাকে বাড়িতে হেঁশেল সামলানার দায়িত্ব। এটাই চেনা ছবি। কিন্তু, কোনও হোটেল বা ক্যান্টিনে খেতে গিয়ে যদি দেখা যায় রান্না, পরিবেশন সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মহিলারাই, তা হলে একটু অবাক হতে হয় বৈকি!
সিউড়ি শহরের ডিআরডিসি হল সংলগ্ন ‘দিদিদের হেঁশেল ঘর’-এ মধ্যাহ্নভোজন সারলে এমন অভিজ্ঞতা হতেই পারে। মাস দুয়েক আগে জেলা সদরের অফিস পাড়ায় ‘ডিস্ট্রিক্ট রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেল’-এর তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় এমনই একটি ক্যান্টিন শুরু করেছেন সিউড়ি ২ ব্লকের বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ২০ জন সদস্য। দায়িত্বে থাকা মহিলারা জানাচ্ছেন, অল্পদিনের মধ্যে ভাল সাড়া মিলেছে। সীমিত খরচে বাড়ির রান্নার স্বাদ মিলছে ওই ক্যান্টিনে।
‘হেঁশেল ঘর’-এর দায়িত্বে থাকা মহিলারা জানান, সরকারি অফিস, আদালতের ছুটি ও রবিবার বাদে রোজ সকাল সাড়ে দশটা থেকে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত খোলা থাকে তাঁদের ক্যান্টিন। দুপুরের খাবার ও টিফিন থেকে চা— সবই মেলে সেখানে। প্রশাসন ভবন, থানা, আদালত, ব্যাঙ্ক বাজার, সবই এই এলাকায়। ক্যান্টিনের সম্পাদিকা তুষারমালা দাস বলেন, ‘‘সরকারি কর্মী ও আধিকারিকেরা তো বটেই, কোনও কাজে সিউড়িতে এসে অনেকেই আমাদের ক্যান্টিনে আসছেন। খাবার ও পরিষেবা প্রত্যেকের পছন্দ হচ্ছে।’’ শুধু হোটেল চালানো নয়, প্রয়োজনে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের খাবারের অর্ডার নিয়ে তা সরবরাহও করছেন স্বনির্ভর দলের মহিলারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ জীবিকা মিশনের উদ্দেশ্যই হল গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করা। জেলা সদরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী পরিচালিত হোটেল করার পিছনেও সেই উদ্দেশ্য। গোটা পরিকল্পনার মূলে ডিস্ট্রিক্ট রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেলের প্রজেক্ট ডিরেক্টর তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শুভাশিস বেজ। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার আগে নির্বাচিত মহিলা সদস্যদের রান্না ও ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার পরে ছোট ছোট করে সরকারি খাবার সরবরাহের বরাত সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। তাঁরা দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করার পরেই পাকাপাকি ভাবে ক্যান্টিন খোলার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। মাত্র ৪০ টাকায় নিরামিষ খাবার (ডাল, ভাত, দু’টি সবজি ও চাটনি) এবং আরও ১৫, ২০ বা ৫০ টাকা খরচ করলে সঙ্গে ডিম, মাছ, মাংস দিয়ে দিব্যি পেটপুরে দুপুরের খাবার খেতে পারেন যে কেউ।
শুভাশিসবাবুর কথায়, ‘‘দিদিদের হেঁশেল ঘর কিছুদিনের মধ্যেই হোম ডেলিভারি শুরু করবে। তার জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থাও করা হবে। শুধু তাই নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকার যে-সব জনপ্রিয় পদ বিখ্যাত, সেগুলিও এই ক্যান্টিনের পদের তালিকায় যুক্ত করার ভাবনা রয়েছে।’’
কযান্টিনের কাজে যুক্ত জ্যোৎস্না দাস, দীপালি সাহা, যশোদা মালরা বলছেন, ‘‘সংসার সামলে হেঁশেল চালাতে আমাদের বাজার থেকে পরিবেশন সবই করতে হয়। চেষ্টা করি, যাঁরা এখানে খেতে আসছেন, পরিবারের সদস্যদের মতোই যত্নে তাঁদের খাওয়াতে। মাসে একটা সম্মানজনক আয় হয়, যেটা আমাদের পরিবারের কাজে লাগে।’’
তবে একটাই অসুবিধা রয়েছে, হেঁশলটি খুব ছোট। সেটি বড় করার আর্জি প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন যশোদারা।