মনোনয়নের পরে দীপালি সাহার সঙ্গে মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বিষ্ণুপুরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
অনাস্থা এনে সোনামুখী পুরসভার বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ড ভাঙতে চেয়েছিলেন ওই পুরসভার তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু, ওই পুরসভারই ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা এলাকার বিধায়ক দীপালি সাহার ভোটেই তৃণমূল অনাস্থায় হেরে গিয়েছিলএমন অভিযোগ তুলে দীপালিদেবীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন স্থানীয় রাজনীতিতে বিধায়কের কট্টর বিরোধী হিসাবে পরিচিত সুরজিৎবাবু। তার পর থেকে সুরজিৎ-দীপালি গোষ্ঠীর কোন্দল বাঁকুড়া জেলার রাজনীতিতে উঠে এসেছে বারবার। সেই ছায়া এ বারও এসে পড়ল আগামী আসন্ন পুরনির্বাচনে। আর সেই দ্বন্দ্বের জেরেই সোনামুখী পুরসভায় তাদের প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও প্রকাশ করেনি শাসকদল।
মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনের আগে দু’জনকে এক সঙ্গে দেখা গেল না বিষ্ণুপুর মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে। দীপালিদেবী যখন তাঁর অনুগামীদের নিয়ে পুরভোটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছেন, সুরজিৎবাবু তখন তাঁর অনুগামীদের নিয়ে অনেকটাই দূরে। শেষ অবধি দীপালিদেবী এ দিন মনোনয়ন জমা দিলেও সুরজিৎবাবুর দেওয়া হয়নি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মূলত কার অনুগামীদের নাম বেশি সংখ্যায় প্রার্থী তালিকায় থাকবে, সোনামুখীতে যুযুধান ওই দুই নেতার মধ্যে পুরভোটে বিবাদ মূলত সেই বিষয় নিয়েই। রাজ্যের অন্য অনেক পুরসভার মতো তাই এখানেও এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি তৃণমূল। কেন তালিকা বেরলো না, এ প্রশ্নের জবাবে বিধায়ক বলেন, “দলের প্রার্থী তালিকা মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন, বুধবার জানাব।” অশান্তির ভয়েই কি এই শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা? এ বার দীপালিদেবীর উত্তর, “এ সবই মিডিয়ার মনগড়া। আমাদের মধ্যে কোনও অশান্তি বা বিরোধ নেই।” যদিও তালিকায় কার কার নাম থাকছে, তা মোটের উপরে জেনে গিয়েছেন দুই শিবিরের তৃণমূল কর্মীরা। দলের দ্বন্দ্ব নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি সুরজিৎবাবু। যদিও তাঁর অনুগামীদের একাংশের দাবি, “জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব দাদার কাছেও তালিকা চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ আসনের এই পুরসভায় দাদার দেওয়া তালিকা থেকে দাদা-সহ স্রেফ ৩টি মাত্র নাম বেছে নেওয়া হয়েছে। বাকি ১২টি নাম দীপালিদেবীর দেওয়া। এতটা বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না।” দীপালিদেবীর অনুগামী এক তৃণমূল নেতাও জানিয়েছেন, বিধায়কের প্রস্তাবিক ১২ জনের নাম প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়েছে।
২০১০ সালের পুরভোটেএই পুরসভায় ৮টি ওয়ার্ডে জিতে পুরবোর্ড গড়েছিল বামফ্রন্ট। তৃণমূল পেয়েছিল ৬টি আসন। নির্দল এক। তবে, তার পর থেকে বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে সোনামুখী পুর-এলাকায় এগিয়ে রয়েছে তৃণমূলই। বামফ্রন্ট অবশ্য বেশ কিছুদিন আগেই ১৪ জনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে গিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রচারেও নেমে পড়েছে তারা। হাতিয়ার করেছে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলকেই। সিপিএমের সোনামুখী জোনাল কমিটির সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্য বলেন, “যে দল নিজেদের মধ্যে মারামারি করে, মানুষ সেই দলের প্রতি আস্থা রাখবেন কী করে? আমরা মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করি। ফের আমরাই জিতব।” শেখরবাবুর বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে সুরজিৎবাবুর পাল্টা প্রতিক্রিয়া, “এ বার আর ওদের ক্ষমতায় ফিরতে হবে না। ওদের আমলে বাসস্ট্যান্ড, বাইপাস, দমকল কিছুই হল না সোনামুখীতে। মানুষ এ বার ওদের প্রত্যাখ্যান করবেন।”