বাজে প্রাণহানি রুখতে ভিডিয়ো প্রচার জেলায়

বজ্রপাত নিয়ে সচেতনতা বাড়লে  মৃত্যুর সংখ্যা কমতে পারে বলছেন আধিকারিকেরা। জেলার ভারপ্রাপ্ত বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আধিকারিক অরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সবার ক্ষেত্রে হয়তো সম্ভব নয়, তবে বাজ পড়ার সময় কিছু পরামর্শ মেনে চললেই মৃত্যু কমবে।’’ তিনি জানান, এই বিষয়ে ২ মিনিটের ভিডিয়ো তৈরি করেছে রাজ্য প্রশাসন। বিভিন্ন এলাকায় ওই ভিডিও দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০২:১৮
Share:

ফাইল চিত্র।

মঙ্গলবার সন্ধেয় আকাশ ঢেকেছিল কালো মেঘে। গোয়ালে গরু বাঁধছিলেন দুবরাজপুরের বনবন্দুরার বাসিন্দা অশীতিপর হাবল ঘোষ। ঠিক সেই সময়ে গোয়াল ঘর সংলগ্ন তালগাছে পড়ে বাজ। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থালেই মৃত্যু হল তাঁর।

Advertisement

জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর সূত্রে খবর, শুধু হাবলবাবু নন, এ বছর এখনও পর্যন্ত বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে আরও ১০ জনের। বর্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত আরও কত জনের মৃত্যু হবে বজ্রাঘাতে, সেটাই চিন্তায় রেখেছে দফতরকে। আধিকারিকদের বক্তব্য, জেলায় অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যত মানুষ মারা যান, বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা তার কয়েকগুণ বেশি।

গ্রামবাংলায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যান বাজ পড়ে। কালবৈশাখী-পর্ব থেকে বর্ষাকাল জুড়ে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতের সময় বাইরে না-থাকার পরামর্শ দিচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। এই সময়ে চাষের কাজে গ্রামের প্রচুর মানুষ খোলা আকাশের নীচে থাকতে বাধ্য হন। তাই ঝড়-বৃষ্টি হলেই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। ব্যতিক্রম নয় বীরভূমও। ক্রমশ মানুষের কাছে আতঙ্কের কারণ হচ্ছে বজ্রপাত। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, গত বছর এই জেলায় বাজ পড়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, মেঘের মধ্যে কার্বন-সহ বিভিন্ন দূষিত কণার মাত্রা যত বাড়বে, মেঘে-মেঘে ঘর্ষণে বিদ্যুৎসঞ্চার ততই বা়ড়বে। লম্বা গাছ বাজ টেনে নেয়। গাছ কমে যাওয়ায় বজ্রপাতে প্রাণহানি বাড়ছে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।

Advertisement

বজ্রপাত নিয়ে সচেতনতা বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যা কমতে পারে বলছেন আধিকারিকেরা। জেলার ভারপ্রাপ্ত বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আধিকারিক অরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সবার ক্ষেত্রে হয়তো সম্ভব নয়, তবে বাজ পড়ার সময় কিছু পরামর্শ মেনে চললেই মৃত্যু কমবে।’’ তিনি জানান, এই বিষয়ে ২ মিনিটের ভিডিয়ো তৈরি করেছে রাজ্য প্রশাসন। বিভিন্ন এলাকায় ওই ভিডিও দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ভিডিয়োয় দেখানো হয়েছে এক ঠাকুমা তাঁর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বাড়িতে বসে গল্প করছেন। হঠাৎ বজ্রপাত হল। ভয়ে ঠাকুমার কোলে এসে বসল নাতনি। ঠাকুমা তাকে জানান, বাজ পড়ার সময় বাইরে থাকা উচিত নয়। কিন্তু বাইরে থাকলে কী হবে?— নাতনির প্রশ্নে ঠাকুমা যা বলছেন সেটাই সতর্কতা।

কী বলছেন তিনি? এক, বাইরে থাকলে কান চাপা দিয়ে গোড়ালি জড়ো করে বসে পড়তে হবে। দুই, ইলেকট্রিক খুঁটি, গাছের নীচে দাঁড়ানো য়াবে না। পুকুর থেকেও দূরে থাকতে হবে। কোনও ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের ব্যবহার, হাত ধোওয়া, স্নান করা, নৌকা চালানো বা সাঁতার কাটা চলবে না। নলকূপে বা ছাতার ধাতব হাতল ছোঁয়া যাবে না।

প্রশাসনের কর্তাদের একাংসের বক্তব্য. মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসলে শরীরের সঙ্গে মাটির সংযোগ ন্যূনতম হয়। বসার সময়ে গোড়ালি পরস্পরকে ছুঁয়ে থাকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ শরীরে ঢুকলেও তা উপরের দিকে উঠতে পারবে না। এক পা দিয়ে উঠে অন্য পা দিয়ে তা বেরিয়ে যাবে। এর ফলে হৃদযন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। তবে ভিন্ন মতও রয়েছে। খোলা জায়গায় মাটিতে কুঁকড়ে বসে থাকলেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement