হাতে হাতে সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেসের পতাকা। পুরুলিয়ায় বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
মিছিলের টেক্কা দেওয়ার লড়াই জমে গেল পুরুলিয়ায়।
মিছিলের ভিড় দিয়ে ভোটের সমর্থন কোন দিকে, তা আঁচ করা যায় না। তবুও রবিবারের বিকেলে মমতার পদযাত্রার ভিড় বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে কংগ্রেসের সাংসদ-অভিনেতা রাজ বব্বরের মিছিলের সঙ্গে তুলনায় উঠে এল বারবার। এ দিন জেলা সদরের রাস্তা কার্যত দখল করে নিয়ে কংগ্রেস ও বামকর্মীরা দাবি করলেন, মমতার পদযাত্রাকে তাঁরা টেক্কা দিয়েছেন। তাতেই নির্বাচনের চারদিন আগে ভোটের তরজা জমে গেল পুরুলিয়ায়।
এ দিন সকাল ১১টা থেকে জোটের মিছিল হওয়ার কথা ছিল পুরুলিয়ায়। কিন্তু দু’দলের তরফেই কর্মীদের ঢের আগে জমায়েত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই পুরুলিয়া শহরের আশপাশের গাঁ পুড়দা থেকে সাত সকালেই চলে এসেছিলেন কংগ্রেস কর্মী ভক্তি কালিন্দী। সঙ্গে ছিলেন এলাকার আরও কয়েকজন। তাঁদের মতোই পুরুলিয়া কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা থেকে কংগ্রেস ও বামকর্মীরা দলে দলে জড়ো হয়েছিলেন শহরের জুবিলি ময়দানে। সেখান থেকেই মিছিল হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু রাজ বব্বরের চপার যখন শহরের বাইরে রায়বাঘিনী ময়দানের মাটি ছুঁল তখন ঘড়ির কাঁটা বেলা ১২টা। মাথার উপরে গনগনে সূর্য। কিন্তু মানাড়া, মহাড়া, বেলমা বা ভেলাইডি থেকে আসা জোটকর্মীদের তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না। ঘাম মুছতে মুছতে তাঁরা শহরের পথে ভিড়ের বহর দেখানোর জন্য বরং উসখুস করছিলেন।
রাজ বব্বরকে হেলিপ্যাড থেকে গাড়িতে আসতে দেখেই চারপাশে শোরগোল উঠল— এসে গিয়েছেন। ব্যাস শুরু হয়ে গেল ভক্তি ও তাঁর সঙ্গীদের নাচ। বেজে উঠল ঢোল, মাদল থেকে ব্যাঞ্জো প্রভৃতি। মিছিল ছিল বর্ণময়। কারও মাথার টুপিতে হাত চিহ্ন, হাতের কঞ্চিতে তেরঙ্গা পতাকা, কারও বা ফব-র প্রতীক বাঘ কিংবা কাস্তে-হাতুড়ি। কংগ্রেস ও বামেদের পতাকায় মিছিল আরও রঙিন হয়ে উঠেছিল।
মিছিলের মাথা যখন চকবাজারে পৌঁছল, তখনও তিন কিলোমিটার দূরে জুবিলি ময়দান থেকে মিছিলে লোক ঢুকছে। রাজ বব্বরের গাড়িতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো, পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী সুদীপ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। মিছিল যায় হাসপাতাল মোড়, পোস্ট অফিস মোড়, চকবাজার, মধ্যবাজার, নামোপাড়া, রথতলা হয়ে ওল্ড পোস্ট অফিস ঘুরে ফের জুবিলি ময়দানে।
কাঁধে বছর চারেকের নাতিকে নিয়ে মিছিলে হাঁটছিলেন ভেলাইডি গ্রামের ভারতী মাহাতো। ভুরসার সিপিএম কর্মী কামদেব মাহাতো বা পিঠাজোড় গ্রামের সত্তর ছুঁইছুঁই কংগ্রেস কর্মী গয়ারাম গড়াই, সিপিএমের মানাড়ার ষাটোর্ধ্ব আনন্দ মাহাতো এক সঙ্গে পাশাপাশি মিছিলে হাঁটছিলেন।
কেন মিছিলে এলেন? মহাড়া গ্রামের নয়ন চৌধুরী, সুনীল পরামাণিকদের কথায়, ‘‘আমরা বামফ্রন্ট কর্মী। গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে মানুষের জোট হয়েছে। তাই মিছিলে পা মিলিয়েছি। সাধারণ মানুষকেও মিছিলে আসতে বলছি।’’ বাম শিক্ষক সংগঠনের নেতা দিলীপ গোস্বামীর কোমরে কংগ্রেসের পতাকা বাঁধা ছিল। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পথে নামতেই হয়েছে। মানুষের দাবিতেই পথে নেমেছি। এখন কংগ্রেস বা সিপিএমকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়।’’
মিছিলে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য পঞ্চকোট রাজ পরিবারের উত্তরসূরী সোমেশ্বরলাল সিংহ দেও। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী তাঁরই নাতি দিব্যজ্যোতি প্রসাদ সিংহ দেও। নাতি যেখানে তৃণমূলের প্রার্থী, সেখানে দাদু একেবারেই পথে নেমেছেন নাতির বিরোধী প্রার্থীর হয়েই! সোমেশ্বরবাবুর কথায়, ‘‘ধর্ম সঙ্কটে পড়ে গিয়েছি। একদিকে নাতি, অন্যদিকে দল। কিন্তু আমার এতদিনের রাজনৈতিক বিশ্বাস ও আদর্শকে কী করে অস্বীকার করব?’’
এটাই তাঁর প্লাস পয়েন্ট বলে মানছেন কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস অন্তপ্রাণ মানুষের যেমন ভালবাসা পাচ্ছি. তেমনই বামপন্থী জনতাও আমার পাশে রয়েছেন। মানুষের এই জোটকে এ বার ঠেকায় কে?’’