কলকাতা হাই কোর্ট।
জেলাশাসকের নির্দেশের পরেও বাঁকুড়া জেলা পুলিশ তাঁদের সন্তানকে খুঁজে বের করে আনতে পারেনি। এ বার কলকাতা হাইকোর্ট আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে ওই শিশু কন্যাকে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিল। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এই রায় দিলেও মেয়েকে কোলে না পাওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছেন না বাঁকুড়া শহর লাগোয়া সানবাঁধার ওই দম্পতি। সূত্রের খবর, আদালত এ-ও জানিয়েছে, প্রতি শনিবার দু’ঘণ্টা ওই স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থার কর্মী দম্পতিকে শিশুটির সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। সেই সঙ্গে বাঁকুড়া জেলা শিশুকল্যাণ সমিতি যাতে শিশুটির উপরে নজর রাখে, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
শিশু কন্যার মা শনিবার বলেন, “পুজোর আগে বাঁকুড়ার জেলাশাসক দু’পক্ষের মতামত শুনে মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিন আশায় থেকেও মেয়েকে পাইনি। ওরা আমার মেয়েকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। অথচ, পুলিশ খুঁজে বের করতে পারল না। হাইকোর্ট জেলাশাসকের নির্দেশই বহাল রেখেছে। হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু মেয়েকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত কিছুতেই ভরসা পাচ্ছি না।”
শিশুটির পরিবারের পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার জেলাশাসকের নির্দেশ বাতিল করার জন্য বারাসতের ওই দম্পতি হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন। বিচারপতি দেবাংশু বসাক সেই আর্জি খারিজ করে জানিয়েছেন, শিশুটিকে তাঁর বাবা-মায়ের কাছেই তুলে দিতে হবে। বারাসতের ওই দম্পতি যদি শিশুটিকে স্নেহ করেন বা কিছু করতে চান, তাহলে তাঁরা করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা শিশুটিকে দেখতে যেতেও পারেন।’’ চেষ্টা করেও বারাসতের ওই দম্পতি বা তাঁদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
২০১৭ সালে এক সঙ্গে তিন শিশু কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন বাঁকুড়ার ওই মহিলা। জন্মের পরেই এক জনের মৃত্যু হয়। বাকি দু’জনের মধ্যে এক জনের মুখের তালু কাটা ছিল। বধূর দাবি, তাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বিনাখরচে চিকিৎসা করানোর আশ্বাস দিয়ে একটি স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বারাসতের ওই দম্পতি আট মাস বয়সের মেয়েকে নিয়ে যান। তার পরে বছর দুই কেটে গিয়েছে। কিন্তু শিশুটিকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে মেয়েকে ফিরে পেতে বাঁকুড়া জেলা ‘চাইল্ড লাইন’-এর মাধ্যমে জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে আবেদন জানান তিনি। শিশুকল্যাণ সমিতি দু’পক্ষের মতামত জেনে শিশুটির স্বাস্থ্যের স্বার্থ দেখিয়ে বারাসতের দম্পতিকেই তাকে রাখার নির্দেশ দেন।
সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে জেলাশাসকের কাছে মেয়েকে ফিরে পেতে আবেদন করেন বধূ। পুজোর মুখে জেলাশাসক নির্দেশ দেন, অবিলম্বে ওই শিশুকন্যাকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার। পুলিশকে নির্দেশ দেন শিশুটি উদ্ধার করার জন্য। পুজোর চার দিন ওই বধূ পুলিশের সঙ্গে বারাসত, কুলপি-সহ বিভিন্ন জায়গায় মেয়ের খোঁজে ঘোরেন। কিন্তু পুলিশ ওই শিশু ও দম্পতির খোঁজ পায়নি। তারপরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য পুলিশকে বলেছিলাম। গোটা বিষয়টি পুলিশ দেখছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও দাবি করেছেন, পুলিশের তরফে শিশুটিকে উদ্ধারের কোনও খামতি নেই। তিনি বলেন, ‘‘শিশুটির খোঁজে পুলিশ সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খোঁজ চালিয়েছে। এখনও খোঁজ চলছে। আশা করি, শীঘ্রই শিশুটিকে উদ্ধার করা যাবে।’’
তবে শিশুটির মা বলেন, “আমার মেয়েকে ওদের হাত থেকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমি থামব না। লড়াই চালিয়েই যাব।’’