বিষ্ণুপুরের গ্রামে চলছে গুড় তৈরি। নিজস্ব চিত্র।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় মাথায় হাত নলেন গুড়ের কারবারিদের। ঘন ঘন নিম্নচাপের গেরোয় চলতি বছরে বার বার ধাক্কা খেয়েছে শীতের গতি। শেষমেশ আকাশ পরিষ্কার হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নামতে থাকে পারদ। তার পরে, তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটা নেমে যাওয়ায় মুখে হাসি ফুটেছিল ‘শিউলি’ (রস সংগ্রহকারী)-দের মুখে। কিন্তু গত শনিবার থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। আর তাতে যেমন রস কমছে, রসের গুণগত মানও পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন গুড় প্রস্তুতকারীরা।
বাঁকুড়ার ওন্দায় সমবায় করে পাঁচ হাজার খেজুর গাছ নিয়ে গুড় ও গুড়ের বরফি তৈরির কাজ করছেন স্থানীয় কিছু যুবক। সমবায়ের পরামর্শদাতা দীপক ঘোষ বলেন, “একে ঠান্ডা কমছে। তার উপরে, মেঘলা আবহাওয়ায় গুড়ের উৎপাদন দারুণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গুড়ের গুণগত মানও খারাপ হয়। বৃষ্টি হলে সমস্যা আরও বাড়বে।”
বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামের সত্তার আলি ভাঙ্গি গুড় তৈরি করেন বিষ্ণুপুরের চাঁদাবিলা গ্রামে। ষাটোর্ধ্ব সত্তার বলেন, “ঠান্ডা না পড়লে ভাল গুড় পাওয়া মুশকিল হবে। তাতে আখেরে ব্যবসায় ক্ষতি হবে।” বড়জোড়ার এক গুড় ব্যবসায়ী জামিরুল শেখ জানান, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছ মালিকদের টাকা দিতে হয়। গোটা মরসুমের চুক্তি হয়। ঠিকমতো রস না পাওয়া গেলে যদি গুড়ের উৎপাদন কমে, মরসুমের শেষে লাভ থাকবে কি না, সন্দেহ রয়ে যাচ্ছে।
একই আশঙ্কার কথা শোনা গেল, মুকুটমণিপুর যাওয়ার রাস্তায় গুড় তৈরির ছাউনি করে থাকা সেখ সুরজের গলাতেও। তিনি জানান, বছরের এ সময়ে বাইরে থেকে অনেক পর্যটক আসেন। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তাঁরা অনেকে গুড় কেনেন। তবে এ বারে বৃষ্টিতে গুড় তৈরি দেরিতে শুরু হয়েছে। তাই বিক্রিবাটা অনেকটাই মার খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সকলে চাইছেন, অল্প কিছু দিনের হলেও ঝোড়ো ইনিংস খেলুক শীত। তাতে রস সংগ্রহ বেড়ে গতি আসবে গুড় তৈরিতে।