টাকা ফেরতের দাবিতে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চলল বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
ব্যবসায়ী-বিশ্বভারতী সংঘাতে ফের ধুন্ধুমার শান্তিনিকেতনে। পৌষমেলা শেষের পরে দু’মাস কাটলেও এখনও সিকিয়োরিটি মানি না ফেরত পাওয়ায় মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন ব্যবসায়ীরা। রাত অবধি চলা বিক্ষোভ গড়াল ধস্তাধস্তি, হাতাহাতিতে। এ দিন ব্যবসায়ীরা বিশ্বভারতীকে তাঁদের স্মারকলিপি জমা দিতে না পারায় দাবি না মিটলে ফের বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও উত্তর দেননি।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন পৌষমেলায় স্টল বসানোর ক্ষেত্রে অনলাইন বুকিং চালু করা যায়নি। পুরনো রসিদ দেখিয়েই এতদিন দোকানদারেরা মেলার মাঠে পুরনো জায়গাতেই যে যার মত স্টল করে বসে পড়তেন। জায়গার দামের মধ্যেও প্রচুর বৈষম্য ছিল বলে অভিযোগ। এর ফলে স্টল বসানোর ক্ষেত্রে একাধিক অসাধু ব্যবসায়ী এবং কিছু দালাল চক্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা গিয়েছে বারবার। তাই এ বছরই মেলায় স্টল বসানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এ বার প্রথম পৌষমেলায় অনলাইনের স্টল বুকিং প্রক্রিয়া চালু করতে উদ্যোগী হয়। পাশাপাশি মেলা যাতে চার দিনের হয় ও চার দিনের পর কোনও
দোকানদার যেন মেলা মাঠে বসে থাকতে না পারেন তার জন্য এ বছর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্টল বসানোর জন্য জায়গার ভাড়া ছাড়াও আলাদাভাবে সিকিয়োরিটি মানি জমা নেওয়া হয়। মেলা শেষের পর দু’মাস কাটলেও সেই টাকা এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
এ দিন সিকিয়োরিটি মানি ফেরত না পাওয়া ব্যবসায়ীরা টাকা ফেরতের দাবিতে একটি স্মারকলিপি জমা দিতে আসেন বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিকের দফতরে। সেখানে কেউ তাঁদের স্মারকলিপি জমা নিতে চাননি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এরপরই ব্যবসায়ীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন ও বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের ফলে কার্যত কেন্দ্রীয় দফতরের সামনের রাস্তা এ দিন এক প্রকার অচল হয়ে যায়। সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাঁদের বিক্ষোভ। সন্ধ্যায় বিশ্বভারতীর কর্মসচিব আশা মুখোপাধ্যায় দফতর থেকে বেরোনোর সময় ব্যবসায়ীরা তাঁকে স্মারকলিপি দিতে যান। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা ব্যবসায়ীদের বাধা দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বচসা বাধে। তা গড়ায় হাতাহাতিতে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয়েছিল মেলা শেষ হওয়ার পরে পরেই ব্যবসায়ীদের জমা রাখা সিকিয়োরিটি মানি অনলাইনের মাধ্যমে ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। সে মতো এ বছর ব্যবসায়ীদের মেলায় স্টল বসানোর ক্ষেত্রে জায়গার ভাড়া ও সিকিউরিটি মানি অনলাইনে মাধ্যমে জমা দিতে হয়েছিল। নতুন নিয়ম অনুযায়ী দোকানদারদের জায়গা অনুসারে ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত সিকিয়োরিটি মানি জমা রাখতে হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষে পৌষমেলা শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এখনও অধিকাংশ ব্যবসায়ী সিকিয়োরিটি মানি ফেরত পাননি বলে অভিযোগ। গত মাসে ব্যবসায়ীদের জমা রাখা সিকিউরিটি মানির অর্ধেক টাকা কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীকে ফেরত দেওয়া হলেও বাকি টাকা এখনও বিশ্বভারতীর তরফ থেকে ফেরত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ দিন আশাদেবী তাঁদের দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
মেলায় স্টল দেওয়া ইলামবাজারের ব্যবসায়ী জগন্নাথ বাগদি বলেন, ‘‘দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঘুরছি, অথচ সিকিয়োরিটি মানির একটি টাকাও এখনও আমাকে ফেরত দেওয়া হয়নি। তাই আজ আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’’ ব্যবসায়ী আমিনুল হুদা, উজ্জ্বল রায়রা বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী বলেছিল মেলা শেষ হওয়ার পরে পরেই সিকিয়োরিটি মানি ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত সেই টাকা আমাদের ফেরত দেওয়া হয়নি। দ্রুত প্রাপ্য টাকা ফেরত না দিলে আগামী দিনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’