উদয় সাহার সেই বিখ্যাত বাস-বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র
মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে বোলপুর-সিউড়ি রুটের আস্ত একটা বাস। উঠতে গেলে নজরে আসে, আসলে সেটা বাস নয়, বাড়ি। বসবাসের জায়গা। বীরভূম জেলার পাড়ুই থানার ধানাইমোড় গ্রামের মৃৎশিল্পী উদয় দাসের এ হেন কীর্তি দেখলে এমন ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক।
উদয়ের কীর্তি দেখতে রোজই ভিড় জমাচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁর বাস-বাড়ি এখন অনেকেরই সেলফি তোলার প্রিয় জায়গা। উদয়ের কথায়, ‘‘ছোটবেলায় যখন প্রথম বার বাসে চড়েছিলাম, সেই সময় এই যানটিকে ভালবেসে ফেলি। ইচ্ছা ছিল, এমন একটা বাড়ি বানাব। সেই ইচ্ছাপূরণ হয়েছে।’’
ছোটবেলা থেকে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন উদয়। পরে আক্ষরিক অর্থেই রাজমিস্ত্রি হয়ে ওঠেন তিনি। উদয়ের পরিবার মৃৎশিল্পের কাজেও সঙ্গেও যুক্ত। বংশগত ভাবে সেই কাজও শিখে ফেলেছিলেন তিনি। উদয়ের সেই শিল্পী সত্ত্বার পরিচয় মিলেছে এই বাস বাড়ি নির্মাণেই।
বাসের আদলে উদয়ের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
বরাবর মাটির বাড়িতেই বাস করেছেন উদয়। স্বপ্ন ছিল কোঠার বাড়িতে বাস করবেন। স্বপ্নের সঙ্গে ইচ্ছার মিশেলে উদয় তৈরি করেছেন এই বাসের আদলে বাড়ি। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর লকডাউনের সময় কাজ শুরু করেছিলাম। তার পর চড়া দামের কারণে বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। তবে এ বছর ঋণ নিয়ে শখের বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ করেছি।’’ উদয়ের স্ত্রী চন্দনা বলছেন, ‘‘বাস-বাড়ি তৈরি কথা শুনে আমি প্রথমে আঁতকে উঠেছিলাম। কী ভাবে এত টাকা জোগাড় হবে! তবে উনি আমাকে সাহস জুগিয়েছিলেন। আমরাও বাড়ির কাজে হাত লাগিয়েছি। প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।’’
বাস-বাড়ি নির্মাণ শেষ। তবে সেখানে বসবাস এখনও হয়ে ওঠেনি উদয়ের। তাঁর কথায়, ‘‘দ্রুত একটা শুভ দিন দেখে উঠে পড়ব বাসে, মানে গৃহপ্রবেশ করব।’’ উদয়ের কাণ্ড দেখে এক প্রতিবেশীর মন্তব্য, ‘‘চলতি কা নাম শুধু গাড়ি কেন, জীবনও তো বটে। সেই জীবন-গাড়িতেই চড়ে বসেছেন আমাদের উদয়।’’