চুরির পরে। বোলপুরে মুলুক আদর্শপল্লিতে বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
কয়েক দিন আগেই বোলপুর শহরে পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ বার এক আধাসেনা কর্মীর বাড়ির তালা ভেঙে গয়না ও নগদ টাকা চুরির অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঘটনাটি ঘটেছে বোলপুরের মুলুকের আদর্শপল্লিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার বাসিন্দা সমীরণ ঘোষ বর্তমানে মালদহে আধাসেনায় কর্মরত। আদর্শপল্লির বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। বুধবার রাতে তাঁর শিশুকন্যা হঠাৎই অসুস্থ বোধ করায় চিকিৎসার জন্য বাড়ি তালাবন্ধ করে ওই এলাকায় থাকা দেওরের বাড়ি চলে আসেন সমীরণের স্ত্রী বুলা ঘোষ। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি ফিরে দেখেন, সদর দরজা তালা ভাঙা। ভিতরে জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। খবর পেয়ে ঘটনার তদন্তে আসে বোলপুর থানার পুলিশ। বুলার অভিযোগ, “মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাড়িতে ছিলাম না। তার মধ্যেই চারটে আলমারির তালা ভেঙে নগদ টাকা ও কয়েক ভরি সোনার গয়না এবং আরও কিছু জিনিস নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আমি চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুলিশ এই চুরির কিনারা করুক।”
তবে, স্রেফ এক রাত বাড়ির বাইরে থাকার মধ্যেই কী ভাবে এত বড় চুরির ঘটনা ঘটল, তা ভাবাচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। তাও পরিবারের সদস্যেরা যেখানে ছিলেন ওই এলাকাতেই! পুলিশের ধারণা, কোনও ভাবে বাড়ি খালি থাকার কথা জেনে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সেই সুযোগ নিয়ে তারা হানা দিচ্ছে বাড়িতে। মাসখানেকের ব্যবধানে বোলপুর ও শান্তিনিকেতন থানা এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়ে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
কয়েক দিন আগেও শান্তিনিকেতনে এক মহিলা এবং বিশ্বভারতীর এক ছাত্রীর কাছ থেকে একই কায়দায় ব্যাগ ছিনতাই করে বাইক-আরোহী দুষ্কৃতীরা। বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকাতেও ওই দিনই এক বৃদ্ধের কাছ থেকে গলার হার ও সোনার আংটি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে বাইকে থাকা দুই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সপ্তাহ খানেক আগে বিশ্বভারতীর এক গবেষক ছাত্রকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, পরপর চুরির ঘটনা ঘটছে। জেলা পুলিশ সুপার রাজ নারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশ সুপার এ কথা বললেও শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নাগরিকেরা। তাঁদের দাবি, বহু ঘটনার কিনারাই হচ্ছে না।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি বোলপুর লায়েক বাজার এলাকার বাসিন্দা টুলটুল সেনের শান্তিনিকেতনে ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তাঁর ব্যাগে থাকা কয়েক হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন এবং সোনার দুল খোওয়া যায়। সেই ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি। ওই মহিলার স্বামী শচীনন সেন বলেন, “এত দিন হয়ে যাওয়ার পরেও কিনারা করতে পারল না পুলিশ। তার মাঝে শহরে লাগাতার চুরি-ছিনতাই হচ্ছে। আমরা উদ্বিগ্ন।”
চলতি মাসেরই ২ তারিখ বোলপুরের কাশিমবাজারে কৃষি দফতরের কর্মী উৎপল পালের বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে টাকা-গয়না চুরি হয়নি। উৎপল বলেন, “কুড়ি দিন পার হয়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীরা অধরা। আবারও এমন চুরির ঘটনা আমাদের ভাবাচ্ছে।”