সুরুলে নিজের বাড়িতে বাটিক শিল্পের কাজে মগ্ন কানন ভট্টাচার্য মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেজ, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন তাঁর স্বামী শিল্পী কৃষ্ণবন্ধু ভট্টাচার্য। তিনিও শিল্পসদনে দীর্ঘদিন বাটিকের কাজ শিখেছিলেন। সেই শিল্পকে আঁকড়েই ৭৬ বছর বয়সেও কোনওক্রমে সংসার চালাচ্ছেন কানন ভট্টাচার্য। সম্মান বা আর্থিক সাহায্য কোনওটাই মেলেনি বলে অভিযোগ।
কানন জানান, ও পার বাংলা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। এখানেই বড় হয়ে ওঠা। পরে কৃষ্ণবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কৃষ্ণবন্ধুর সুবাদে নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ, বিনোদবিহারীর সান্নিধ্যে পেয়েছিলেন কানন। তাঁদের কাছেই শিল্পসদনে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ ও বাটিক শেখার অনুপ্রেরণা পান তিনি।কলাভবন সূত্রে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের আগ্রহে শান্তিনিকেতনে বাটিকের চর্চা শুরু হয়। নানা শিল্পীর হাত ধরে তা বিকশিত হয়। শান্তিনিকেতনের বাটিকের সুনাম বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। এই শিল্পমাধ্যম শান্তিনিকেতনের বাটিক নামে পরিচিতি লাভ করে। কাজ শিখে এর সঙ্গেই জড়িয়ে পড়েন কানন।
স্বামীর মৃত্যুর পরে এক ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে শ্রীনিকেতনের জীবনকৃষ্ণপল্লিতেই থাকতে শুরু করেন কানন। বর্তমানে ছেলে, বৌমা ও দুই নাতনিকে নিয়ে টিনের ছাউনি দেওয়া এক তলা বাড়িতে তাঁর বাস। অভাব এখন তাঁদের নিত্যদিনের সঙ্গী। সংসার চালাতে ৭৬ বছর বয়সেও কাননের ভরসা বাটিকের কাজ।
কানন বলছিলেন, ‘‘এখনও শান্তিনিকেতনের বাটিক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কাজ করে চলেছি। বিনিময়ে কোনও আর্থিক সাহায্য, সম্মান জোটেনি। এই কাজ ও ছেলের চায়ের দোকানের রোজগার থেকে কোনও রকমে সংসার চলে যায়।” শিল্পসদনের অধ্যাপক বিশাল ভাণ্ড বলেন, “কাঁথাস্টিচ, তাঁতশিল্প যে মর্যাদা পেয়েছে, সেই মর্যাদা শান্তিনিকেতনের বাটিককে কখনওই দেওয়া হয়নি। এই বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখের। ”