এই সেই কাগজের টুকরো। িসউড়ির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
খাস জেলা সদরে শাসকদলের কাউন্সিলরের বাড়িতে পড়ল দু’টি বোমা। কোনওটাই অবশ্য ফাটেনি। তার মধ্যে একটি বোমার উপরে জড়ানো কাগজে লেখা, ‘এটা নমুনা মাত্র’!
রবিবার সিউড়ির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মৃন্ময় মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির ঘটনা। পুলিশ তদন্তে নেমেছে। তবে ঘটনার পরে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরেই। জেলা সদরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও সামনে এসেছে এই ঘটনাকে ঘিরে। খোদ সিউড়ির পুরপ্রধান এই বোমা ফেলার ঘটনা তাঁর বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ বলে অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাউন্সিলর মৃন্ময়বাবু এ দিন বাড়িতে ছিলেন না। কলকাতায় গিয়েছিলেন বাবার ওষুধ আনতে। রবিবার সকালে অন্য দিনের মতো বাড়ির ছাদে পায়রাকে দানা খাওয়াতে উঠে সুতলি বাঁধা একটি বস্তু দেখতে পান তাঁর স্ত্রী চন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। তিনি নিজেও ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর। বস্তুটি আদতে বোমা, মালুম হতেই প্রথমে স্বামী ও পরে পুলিশকে খবর দেন চন্দ্রাণীদেবী। পরে বিকেলে বাড়ির মধ্যেই কাগজে জড়ানো আর একটি বোমা মেলে। কাগজে ছিল হুমকি। পুলিশ এসে দু’টি বোমাই উদ্ধার করেছে। কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটাল, তা নিয়ে পুলিশ এখনও ধোঁয়াশায়। সম্প্রতি এই এলাকা থেকে দু’কিলোমিটার দূরে জেলাশাসকের বাংলো লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছিল। সে রাতেই বোমা পড়েছিল এক সাংবাকিদের বাড়িতেও। এ বার কাউন্সিলরের বাড়িতে মিলল বোমা। তাই এই ঘটনা নিয়ে শহরে জোর চর্চা চলছে।
চন্দ্রাণীদেবী বলছেন, ‘‘একজন কাউন্সিলরের বাড়ি যদি সুরক্ষিত না থাকে, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? জানি না, কে বা কারা এমনটা করল। হতে পারে রাজনৈতিক আক্রোশ।’’ সিউড়ি থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগ এই ঘটনার পিছনে যুক্ত থাকা দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর। তবে মৌখিক ভাবে মৃন্ময়বাবু বা তাঁর স্ত্রী এর বেশি কিছু বলতে না চাইলেও দলের ভিতরের সংঘাত চাপা থাকছে না, সেটা সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের কথায় স্পষ্ট। উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ, ‘‘এক দল কাউন্সিলর আমার
বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য, পদ থেকে আমাকে সরানো। দলের শীর্ষ নেতারা আমার পক্ষে থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘এখন আমি সপরিবার পুরীতে আছি। সেই সুযোগে নিজের বাড়িতে বোমা রেখে আমকে বিপাকে ফেলতে চাইছে। যা কিছু হচ্ছে সবটাই শহর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদারের নির্দেশে।’’
এ কথা শুনে শহর সভাপতি বলছেন, ‘‘আমরা বা যে কাউন্সিলরের বাড়িতে বোমা পড়েছে, তাঁরা কেউই কিন্তু আগে থেকে কিছু বলিনি। কারও নামও করিনি। বলা হয়েছিল দুষ্কৃতীদের কাজ। তবে যখন প্রসঙ্গ উঠলই, একটা কথা বলি, সিউড়িতে এত খারাপ পুরপ্রধান আর আসেননি।’’ তাঁর দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর বর্তমান পুরপ্রধানের বিপক্ষে চলে গিয়েছেন। পদ হারাতে হবে বুঝেই কাউকে ভয় দেখিয়ে যদি পক্ষে রাখা যায়, তাই এমন ‘খেলা’।