‘কাটমানি’র অভিযোগ মিথ্যা, দাবি সুশান্তর

সিউড়িতেও ‘কাটমানি’র অভিযোগ তুলে শুক্রবার বিকেলে তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়ি ঘেরাও করেন উপভোক্তাদের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর ও সিউড়ি শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ০২:১৯
Share:

কাটমানি নিয়ে অভিযোগ ছড়াচ্ছে নানা প্রান্তে। বোলপুরের এই কার্যালয়ের সামনেই হয় বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর থেকেই সরকারি প্রকল্প থেকে ‘কাটমানি’ বা তোলা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বীরভূমের নানা প্রান্তে। গ্রাম ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের সেই ক্ষোভের আঁচ এখন লাগতে শুরু করেছে শহরেও। সেই আঁচ থেকে বাদ পড়েনি এমনকি জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নিজের শহর বোলপুরও! বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘেরাও করে বোলপুরের উপ-পুরপ্রধান তথা দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশ বাউড়ির কার্যালয়। এই ঘটনা তৃণমূল নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ‘কাটমানি’র অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত।

Advertisement

সিউড়িতেও ‘কাটমানি’র অভিযোগ তুলে শুক্রবার বিকেলে তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়ি ঘেরাও করেন উপভোক্তাদের একাংশ। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। উপভোক্তাদের অভিযোগ, 'হাউস ফর অল' বা 'সবার জন্য বাড়ি' প্রকল্পে সিউড়ির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ২৫ হাজার টাকা করে ‘কাটমানি’ নিয়েছেন। সেই টাকা ফেরতের দাবি তুলে এ দিন বিক্ষোভ দেখান ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ। সিউড়ি থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চের বৈঠকে তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ইলামবাজারে তোলার টাকা ফেরত চেয়ে দুই তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। বৃহস্পতিবার সকালেও সাঁইথিয়া শহরে এক যুব তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় এলাকার মানুষ। ওই সন্ধ্যাতেই ইলামবাজারের ধীবর পাড়ায় এক তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘিরে ‘কাটমানি’র টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই বোলপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

এই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর, দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশবাবু। বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন এলাকার ৫০ থেকে ৬০ জন বাসিন্দা। বেশির ভাগই ছিলেন মহিলা। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ করতে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে। এলাকার বাসিন্দা লীনা ভান্ডারী, ছবি তুর্কিদের দাবি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি করার আগেই ওয়ার্ডের দলীয় অফিস থেকে মোটা টাকা নেওয়া হয়েছে। এমনকি যে ঠিকাদার বাড়ি তৈরি করেছেন, তিনিও ছলেবলে টাকা নিয়েছেন।’’ কয়েক জনের আবার অভিযোগ, বাড়ির তৈরির জন্য তাঁর নাম সরকারি তালিকায় উঠলেও বাড়ি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা শিলা হাজরা বলেন, ‘‘বাড়ির জন্য আমার নাম অনেক দিন আগে এসেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাড়ি তৈরি হয়নি আমার। বারবার পুরসভায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’ বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, যেখানে গরিব মানুষেরা বাড়ি পাননি, সেখানে বাড়ি নিয়ে স্বজনপোষণ করছেন উপ-পুরপ্রধান।

দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে মধ্যস্থতার আশ্বাসে এলাকাবাসী ফিরে যান। ঘটনার সময় উপ-পুরপ্রধান নরেশ বাউড়ি বোলপুরে ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘‘আমি কলকাতার এমএলএ হস্টেল এ রয়েছি। কারা বিক্ষোভ দেখিয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে এর পিছনে বিজেপি এবং সিপিএমের হাত রয়েছে।’’

এ দিন সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে বোলপুরে পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতও দাবি করেন, বাড়ির তৈরির নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। ওই বাড়ি নির্মাণ করতে বেনিফিশিয়ারি বা উপভোক্তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘কেউ তাঁদের ভুল বুঝিয়েছে। বাড়ি তৈরির টাকায় কাটমানি হয়েছে, এখনও এমন কোনও লিখিত অভিযোগও কখনও পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুরপ্রধান আরও জানান, মাসখানেক আগে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক যুবক টাকা নিয়েও বাড়ি তৈরি না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করছিলেন বলে তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছিল। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

বোলপুরের মতো সিউড়ির ক্ষেত্রেও উপভোক্তাদের অভিযোগ মানতে চাননি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং তাঁর পরিবারের লোকজন। কাউন্সিলরের দেওর তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোনও টাকা নেওয়া হয়নি। আর উপভোক্তারা টাকা তো ব্যাঙ্কে দিয়েছেন, তারা নিজেদের টাকা নিজেরা তুলছেন। তা হলে কাটমানির প্রশ্ন কোথায় থেকে আসছে?’’ একই সুর শোনা গেছে সিউড়ি পুরসভার পুরপ্রধানের গলায়। পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনার পিছনে বিরোধীদের বা অন্য কারোর উস্কানি থাকয়তে পারে। তবে এটা মানুষের অসচেতনতার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ হল ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্র দেয় দেড় লক্ষ টাকা। রাজ্য দেয় ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা এবং উপভোক্তা দেয় ২৫ হাজার টাকা দিয়ে মোট ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা পায় উপভোক্তারা। এর মধ্যে কোন দুর্নীতির প্রশ্ন নেই। টাকা তো উপভোক্তাদের ব্যাঙ্কে যায়। এই অভিযোগের মানে হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement