অন্নপ্রাশনের প্যান্ডেলে রক্তদানের উদ্যোগ

ছেলের অন্নপ্রাশনকে অন্য ভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন বড়জোড়ার কমলা গ্রামের পার্থপ্রিয় মণ্ডল ও প্রীতি কোনার মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বড়জোড়া শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১২
Share:

সদিচ্ছা: রক্ত দিচ্ছেন অভ্যাগতেরা। নিজস্ব চিত্র

ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে সামাজিক অনুষ্ঠানের চরিত্র। রক্তদান, গাছের চারা বিলির মতো নানা সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড মিশে যাচ্ছে বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে। শুক্রবার বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের কমলা গ্রামের মণ্ডল দম্পতি যেমন ছেলের অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে ফেললেন। তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে অতিথিরা অনেকে মণ্ডল দম্পতির শিশুকে আশীর্বাদ করে রক্তও দিলেন।

Advertisement

ছেলের অন্নপ্রাশনকে অন্য ভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন বড়জোড়ার কমলা গ্রামের পার্থপ্রিয় মণ্ডল ও প্রীতি কোনার মণ্ডল। প্রীতি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে তাঁর কর্মক্ষেত্র। সেখানে যাতায়াতের পথে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের রক্তের জন্য অভিভাবকদের ছোটাছুটি প্রায় সময়েই তাঁর চোখে পড়ে। ঠিক করেছিলেন, সুযোগ পেলে রক্তের অভাবে কষ্ট পাওয়া মানুষজনের জন্য কিছু করবেন। ছেলে প্রত্যূষের অন্নপ্রাশনেই সেই সুযোগ পেয়ে যান। স্বামীকে খুলে বলেন মনের কথা।

একটি সরকারি ব্যাঙ্কের সহায়তা কেন্দ্র চালান পার্থপ্রিয়। স্ত্রীর ইচ্ছায় তিনিও সায় দেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রজীবন থেকে রক্তদান করে আসছি। তাই স্ত্রী যখন বললেন, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য কিছু করতে চান, তখনই ঠিক করি ছেলের অন্নপ্রাশনেই রক্তদান শিবির করব। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করি বড়জোড়া ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে।’’

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই ছেলেকে কোলে নিয়ে রক্তদাতাদের দেখাশোনা করছিলেন প্রীতি। তিনি বলেন, ‘‘বড়জোড়া থেকে আউশগ্রাম যাতায়াতের পথে দেখেছি, রক্তের অভাবে বাচ্চারা কেমন কষ্ট পাচ্ছে। তখনই ইচ্ছে ছিল, রক্তের প্রয়োজন মেটাতে কিছু করব। নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে তাই রক্তদান শিবির করার কথা জানিয়ে এসেছিলাম। অনেকেই এ দিন স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়েছেন দেখে মন ভরে গেল।’’

নিমন্ত্রণে গিয়ে রক্ত দিয়েছেন কমলা গ্রামের উৎপল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ছোট গ্রাম। মোটে একুশটি পরিবারের বাস। সেখানে এ ধরনের সচেতনতা নজির বইকি।’’

ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন ছয় মহিলা-সহ ২৪ জন রক্তদান করেছেন। বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের এই ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে মাসে ২০-২৫ জন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের রক্ত দেওয়া হয়। মণ্ডল দম্পতির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রক্তদানে উৎসাহ দেওয়া ও থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতায় কাজ করা বড়জোড়ার একটি সংস্থার কর্মকর্তা কাঞ্চন বিদ। তিনি বলেন, ‘‘মানসিকতা বদলাচ্ছে। সবাই এই ভাবে রক্তদানকে আন্দোলনের চেহারা দিলে ও থ্যালাসেমিয়া রুখতে সচেতন হলে সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে।’’

ঘটনা হল, গত বছরই কমলা গ্রামে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘গ্রাম ছোট হোক, এখানে সবার মন বড়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement