রক্তের বদলে রক্তের নীতি নিল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালও!
রক্তের আকালে ভুগতে থাকা এই হাসপাতালের ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিল রক্ত পেতে গেলে রক্ত দিতেই হবে। তা সে যে গ্রুপেরই হোক না কেন!
দিন কয়েক আগে কার্যত চিরুনি তল্লাশি করে রক্তদাতা খুঁজছিলেন এই হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীর পরিবার। হাসপাতালের উদ্যোগে চত্বরেই হয়েছিল রক্তদান শিবির। হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্মীরা রক্ত দেন। ৫০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হয়। সেই মজুত রক্ত থেকেই ‘এক্সচেঞ্জ’ পদ্ধতিতে কাজ চালানো হচ্ছে। রক্ত-সঙ্কট মেটাতে সাহায্য চাওয়া হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার।
আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। বাঁকুড়া ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রতিদিন গড়ে ৭০ ইউনিট রক্তের চাহিদা রয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন থ্যালাসেমিয়ায় অসুস্থ রোগীদের রক্ত দেওয়া হয়। প্রায় ২৫০ জন থ্যালাসেমিয়া রোগী প্রতি সপ্তাহে রক্ত নেয় এই হাসপাতাল থেকে। কিন্তু জোগান থাকছে কমবেশি প্রায় ৫০ ইউনিট। এই পরিস্থিতে ব্লাড ব্যাঙ্ক চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
বস্তুত, গরম পড়লেই রক্তের আকাল যেন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছেন। চলতি মাসের শুরু থেকেই গরমের দাপট বেড়েছে। ফলে রক্তদান শিবিরও কমে গিয়েছে। তার উপরে ভোটের মাঝে রাজনৈতিক দলের ব্যানারে রক্তদান শিবির করা যাবে না বলে নির্দেশ রয়েছে। তাই ব্যানার ছাড়া রক্তদানে কিছু দলের আগ্রহ কম। তবে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাঝে মধ্যে কিছু দাতাকে এনে রক্তদানের ব্যবস্থা করায় মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে আবার ব্লাড ব্যাঙ্কের রুগ্ন দশা সামনে চলে এসেছে।
বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার অমিত মজুমদার বলেন, “রক্তের সঙ্কট মেটাতে দিন চারেক আগে একটি বৈঠক হয়। যে কোন কারণেই হোক সংশ্লিষ্ট সবপক্ষ উপস্থিত হতে পারেনি। আমরা সকলের কাছে আর্জি জানিয়েছি। আশা রাখছি সকলের সহায়তায় ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত মজুতের পরিমাণ স্বাভাবিক হবে।” একই সঙ্গে যোগ করছেন, ‘‘রক্তদান শিবির অনেকদিন সে ভাবে হয়নি। ফলে খুবই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা রোগীর আত্মীয়দের দাতা নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক করেছি।”
ব্লাড ব্যাঙ্কের একটি সূত্রই জানিয়েছে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মাসে ১২-১৪ টি শিবির হয়। শীত কমতে শুরু করলে শিবিরও কমে যায়। বছরের অন্য সময় মাসে একটা-দু’টো শিবির হয়। কিন্তু মার্চ মাসে কোনও শিবির হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। তারপরেই চলে এসে ভোট। এই আবহেও আর নতুন করে কোনও রক্তদান শিবির হয়নি। তাতেই শুরু হয়েছে রক্ত-সঙ্কট।