শান্তিনিকেতনের বল্লভপুরে কোপাইয়ের পাড়ে এই নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের স্বীকৃতি পেয়েছে ঠিকই শান্তিনিকেন। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় কোপাই নদী বেআইনি নির্মাণ-সহ নানা কারণে আজ ধ্বংসের পথে। নদীর পাড় দখল করে বেহিসাবি নির্মাণকাজ চালানোর অভিযোগও নতুন নয়। একই ভাবে শান্তিনিকেতনের বল্লভপুর মৌজায় এক রিসর্টের বিরুদ্ধে কোপাই নদীর পাড় বাঁধানোর অভিযোগ উঠেছে।
সেই অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনের তরফে রিসর্ট কর্তৃপক্ষকে নোটিস দিয়ে জমির চরিত্র পরিবর্তন সংক্রান্ত উপযুক্ত শংসাপত্র ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জমা করতে বলা হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই রিসর্ট কর্তৃপক্ষ এক মাসের মধ্যে জমির চরিত্র ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। মহকুমাশাসক(বোলপুর) অয়ন নাথ বলেন, “নদীর পাড় দখল করে যখনই অবৈধ নির্মাণের খবর যখনই আমাদের কাছে এসেছে, তখনই আমরা পদক্ষেপ করেছি। এ ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ ওই রিসর্টের ম্যানেজার সুশান্ত মানিককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “প্রশাসনের নোটিসের আমরা জবাব দিয়েছি। কী জবাব দিয়েছি, তা সংবাদমাধ্যমকে বলতে বাধ্য নই।”
সম্প্রতি, কোপাইয়ের গোয়ালপাড়া সেতু সংলগ্ন এলাকাতেও নদীর পাড় দখল করে কলকাতার এক ব্যবসায়ী অবৈধ নির্মাণ গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ পায় প্রশাসন। সংবাদমাধ্যমে সে খবর সামনে আসতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয় নির্মাণ কাজ। একই ভাবে বল্লভপুর মৌজায় পাথর দিয়ে কোপাই নদীর পাড় বাঁধিয়ে ওই বিলাসবহুল রিসর্ট গড়ে উঠেছে তোলা হয়েছে বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ। নদীর পাড়ের ধারেই উঠেছে রিসর্টের পাঁচিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে নোটিস দেওয়া হয়েছে ওই রিসর্ট কর্তৃপক্ষকে। এ বিষয়ে ময়ূরাক্ষী সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সেচ দফতরের অনুমতি ছাড়া কখনওই নদীর পাড় বাঁধানো যায় না। বিগত এক বছরে বল্লভপুরে এমন কোনও অনুমতিও নেওয়া হয়নি।” বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক তথা নদী বিশেষজ্ঞ মলয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “দখলের প্রবণতা প্রভাবিত করছে কোপাই নদীর প্রাকৃতিক গতিপথকে। বাণিজ্যিক চাহিদায় নদীর স্নিগ্ধতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এটাই বড় দুঃখের।”
শান্তিনিকেতন খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতি সম্পাদক তথা কোপাই আন্দোলনের সদস্য কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোপাইয়ের পাড়ে একের পর এক অবৈধ নির্মাণ গড়ে তুলে নদীর সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতা নষ্ট করা হচ্ছে। আমরা চাই অবিলম্বে প্রশাসন এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুক। যাবতীয় অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করা হোক।’’