দুধকুমার মণ্ডলকে পদে ফেরানোর দাবি

এ বার কাজ না করার হুমকি

গণইস্তফার হুমকির পরে এ বার কাজ না করার ডাক! দুধকুমার মণ্ডলকে বিজেপি জেলা সভাপতির পদে ফেরানোর দাবিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য এমনই ‘কর্মবিরতি’ চালানোর হুমকি দিলেন তাঁর অনুগামীরা। বৃহস্পতিবার রীতিমতো বৈঠক ডেকে ‘রেজোলিউশন’ নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের নেতা-কর্মীদের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০২:২৫
Share:

সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতির অনুগামীরা। ময়ূরেশ্বরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

গণইস্তফার হুমকির পরে এ বার কাজ না করার ডাক!

Advertisement

দুধকুমার মণ্ডলকে বিজেপি জেলা সভাপতির পদে ফেরানোর দাবিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য এমনই ‘কর্মবিরতি’ চালানোর হুমকি দিলেন তাঁর অনুগামীরা। বৃহস্পতিবার রীতিমতো বৈঠক ডেকে ‘রেজোলিউশন’ নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের নেতা-কর্মীদের একাংশ। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি জেলা নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠানোও হয়েছে বলে ওই অনুগামীদের দাবি। এ দিন ‘রেজোলিউশনে’ স্বাক্ষরকারীদের অন্যতম ব্লক কমিটির সদস্য তুষারকান্তি দত্ত, দক্ষিণগ্রাম অঞ্চল কমিটির সভাপতি প্রভঞ্জন মিত্রেরা বলছেন, “কারও প্ররোচনায় নয়, আমরা নাড়ির টানে এসেছি। দলের মতোই দুধকুমারের সঙ্গেও রয়েছে আমাদের নাড়ির টান। বিপদে-আপদে সবার আগে তাঁকেই আমরা কাছে পেয়েছি। তাই তাঁর অমর্যাদা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। দুধকুমারবাবুকে স্বপদে ফেরানো না হলে আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।”

ঘটনা হল, রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জেলায় দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত জোগানো, টাকার বিনিময়ে পুরভোটের টিকিট বিলি-সহ নানা অভিযোগ তুলে গত রবিবার দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন বীরভূমে বিজেপি-র দাপুটে নেতা দুধকুমার। সোমবারই তাঁকে স্বপদে বহাল রাখার দাবিতে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে গণইস্তফার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ময়ূরেশ্বর ২ নং ব্লকের বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। কিন্তু, দলের রাজ্য নেতৃত্ব দুধকুমারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ তো করেইছে, উল্টে প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্জুন সাহাকে জেলা আহ্বায়ক হিসেবে পুরভোট পরিচালনার দায়িত্বও দিয়ে দিয়েছে। আর তার পরেই এক ধরনের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন দুধকুমার মণ্ডল। দলেরই একাংশের দাবি, এ ভাবে হুট করে ইস্তফা দিয়ে এখন হাতকামড়াচ্ছেন তিনি। দলে দুধকুমার-বিরোধী বলে পরিচিত এক নেতার কথায়, “আসলে দুধদা মনে হয় ভাবতে পারেননি, দল তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করে নেবে। ভেবেছিলেন দলকে পদত্যাগ দিয়ে চাপে ফেলে নিজের একাধিপত্য ফিরিয়ে আনতে পারবেন। কিন্তু, রাজ্য নেতৃত্ব তাঁর সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছে!”

Advertisement

এ দিন কোটাসুরে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন মূলত ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক এলাকার দুধকুমার অনুগামীরা। সেখানে ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি অঞ্চল সভাপতি, ব্লক কমিটির সদস্য তুষারকান্তি দত্ত, জেলা মহিলা মোর্চার সদস্য নীলমণি দত্ত, ২ নং মণ্ডল কমিটির সভাপতি বাবলু মণ্ডল-সহ ৪৪ জন নেতা-কর্মী হাজির ছিলেন। তাঁরা একযোগে যে সিদ্ধান্ত নেন তার মূল কথা হল, দুধকুমার মণ্ডলকে জেলা সভাপতির পদে পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত নিজের নিজের এলাকায় দলের হয়ে কেউ কোনও কাজ করবেন না। অন্য কাউকেও দলীয় কাজে সাহায্য করবেন না। সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতির অনুগামীদের বক্তব্য, “যে নেতার জন্য বীরভূমে বিজেপি-র আজ এত বোলচাল। তার কথা গুরুত্বই দিল না দল! দুধদা যে সব অভিযোগ করেছিলেন, তা খুবই গুরুতর। দলে থেকে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব করে দলের ক্ষতি করব, এটা চলতে পারে না। দুধদা তো এরই প্রতিবাদ করেছিলেন মাত্র!” তাঁদের ক্ষোভ, দল এই সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার বদলে দুধকুমারের পদত্যাগই গ্রহণ করে নিল। এই বিষয়টাই সব থেকে বেশি ক্ষুব্ধ করেছে অনুগামীদের।

দলীয় সূত্রের খবর, ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের কালিকাপুরের বাসিন্দা অর্জুন সাহার সঙ্গে পাশের ব্লকের কোটাসুরের দুধকুমারের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। অতীতে জেলা সভাপতির পদ এবং বিধানসভায় টিকিট পাওয়া নিয়ে দু’জনের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছিল বলে খবর। সেই অর্জুনবাবুকেই কার্যত দুধকুমারের বিকল্প নেতা হিসেবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই বেছে নেওয়াকে তাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সদ্য প্রাক্তন সভাপতির অনুগামীদের একটা বড় অংশ। এ দিনের ঘটনাকে সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতির অনুগামীদের ‘নাটক’ বলেই কটাক্ষ করছে দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী। দুধকুমার-বিরোধীদের দাবি, “বাস্তবে এ সব কিছুই হবে না! পদত্যাগের হুমকি দিয়ে রাখলেও এখনও পর্যন্ত কেউ তা করেননি। আসলে পরিকল্পিত ভাবেই এ সব নাটক করানো হচ্ছে।” ওই সব নেতা-কর্মীদের মতে, দুধকুমার আসলে ইস্তফা পাঠিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, তাঁকেই গুরুত্ব দিয়ে পদে বহাল রাখা হবে। কিন্তু, এখন অবস্থা বেগতিক দেখে দুধকুমার-ঘনিষ্ঠরা পথে নামেন। তাঁরাই অনুগামীদের কাছে বার্তা পাছিয়েছেন, দুধকুমার মণ্ডলকে যদি এক ঘণ্টার জন্যও ভালবেসে থাক, তা হলে তাঁর সম্মান রক্ষার জন্য এগিয়ে এসো! তারই পরিণতি এই সব ইস্তফা আর এমন ‘কর্মবিরতি’র হুমকি বলে তাঁদের দাবি।

এ দিকে, দলীয় নেতা-কর্মীদের এই কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই বলই দাবি করেছেন দুধকুমার। এ দিন তিনি বলেন, “কোথায় কোন নেতা-কর্মী-সমর্থক কী পদক্ষেপ করছেন, তা নিয়ে কিছু বলতে পারব না। ওই বিষয়ে আমার কোনও ভূমিকাই নেই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতেই সরে এসেছি। পদ থেকে সরেই থাকতে চাই।”

অন্য দিকে, দুধকুমারের সঙ্গে তাঁর কোনও বিরোধ নেই বলেই দাবি করেছেন অর্জুন সিংহ। কর্মবিরতির সিদ্ধানেত নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ওই বৈঠকের বিষয়ে কিছু জানা নেই। তাই এ নিয়ে কিছু মন্তব্য করব না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement