শহিদ বেদি তৈরির কাজ চলছে বগটুইয়ে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
গত ডিসেম্বরে নলহাটির জনসভা থেকে ২১ মার্চ বগটুইয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করার কথাও বলেছিলেন। সেই মতো প্রস্ততি শুরু করছে জেলা বিজেপি।
সোমবার সকালে সেই বগটুই গ্রামে শহিদ বেদি তৈরির কাজ পর্যবেক্ষণ করলেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা-সহ বিজেপির নেতৃবৃন্দ।
বিজেপি সূত্রে খবর, ২১ মার্চ বগটুই গ্রামে শহিদদের স্মরণ করবে বিজেপি। সেখানে থাকার কথা শুভেন্দুর। এর পরে বগটুই গ্রামেরই পূর্বপাড়ার খেলার মাঠে প্রকাশ্য সভা করার কথাও রয়েছে শুভেন্দুর। এ দিন বিজেপি নেতৃত্ব সেই মাঠটিও পরিদর্শন করেন। ধ্রুব বলেন, ‘‘বগটুই গ্রামে হতদরিদ্র নিরাপরাধ মানুষগুলি প্রায় এক বছর হতে চলল মারা গিয়েছেন। গণতন্ত্র বিরোধী সে ঘটনাকে স্মরণে রাখার জন্য স্মৃতি স্মারক তৈরি হচ্ছে। বিরোধী দলনেতা এসে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। ওই কর্মসূচি যাতে ঠিকঠাক হয় তার জন্য জেলা এবং স্থানীয় নেতৃত্ব পরিদর্শনে এসেছিল। এলাকার মানুষ যাতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কর্মসূচিতে যোগ দেন তার জন্যও কথাও বললাম।’’
২০২১ সালের ২১ মার্চ রাতে বগটুই গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের ভাদু শেখ খুন হন। খুনের মিনিট কুড়ি পরেই ভাদু অনুগামীরা বেছে বেছে বগটুই গ্রামে ভাদু বিরোধীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ। পরের দিন, ২২ মার্চ, বগটুই গ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সোনা শেখের বাড়ি থেকে সাতটি অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তাঁদের মধ্যে ছ’জন মহিলা ও এক জন পুরুষ ছিল। মহিলাদের মধ্যে এক ন’বছরের বালিকাও ছিল। সব মিলিয়ে বগটুই অগ্নিকাণ্ডে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়।
বগটুই হত্যাকাণ্ডের পরের দিনই রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম গ্রামে এসেছিলেন। ২৪ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গ্রামে আসেন। স্বজনহারা পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের চেকও তুলে দেন। তিনি স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। বর্তমানে স্বজনহারা পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সরকারি দফতরে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন গ্রাম ছাড়া থাকার পরে তাঁরা গ্রামেও ফিরে এসেছেন।
কলকাতা হাই কোর্ট বগটুই হত্যাকাণ্ড ও ভাদু শেখ হত্যার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। সিবিআই বগটুই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে বগটুই ১ ব্লকে তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি আনারুল হোসেন-সহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে।অন্য দিকে, বগটুই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখের সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকাকালীন অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সে ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর নলহাটিতে শুভেন্দু অধিকারির সভায় বগটুই হত্যাকাণ্ডে মৃত নাজিমা বিবি ওরফে মীনা বিবির স্বামী ফটিক শেখ বিজেপিতে যোগদান করেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, তার পর থেকেই বগটুই গ্রামে বিজেপি কিছুটা প্রভাব তৈরি হয়েছে। এ দিন ফটিক শেখ বলেন, ‘‘আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার তা তৃণমূলের নেতা ভাদু শেখের অনুগামীরা করেছেন। সে রাতে তৃণমূলের ব্লক নেতা থেকে সর্বোচ্চ নেতাদের জানানো হলেও তাঁরা আমাদের পাশে দাঁড়াননি। পুলিশ-প্রশাসনও আমাদের পাশে ছিল না। ঘটনার এক বছর পরেও মৃতদের শংসাপত্র পাওয়া যায়নি। স্বজনহারাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিজেপি যা করছে তা ঠিকই করছে।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, বগটুই গ্রামে স্বজনহারা মিহিলাল শেখের বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে শহিদ বেদিটি তৈরি করছে বিজেপি। মিহিলাল শেখ বলেন, ‘‘মৃতদের স্মরণে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারিকে আমরা স্বাগত জানাব।
বিজেপির এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি কেবলমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।’’ এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বগটুই গ্রামে সংখ্যালঘু মানুষের মন জয় করার জন্য বিজেপি এ সব করছে। সংখ্যালঘুরা কোনও দিনই বিজেপির পক্ষে নেই। কারণ, তাঁরা জানেন বিজেপি এলে তাঁদের কী ক্ষতি হবে।’’