বিজয় মিছিল থেকে ফেরার পথে বিজেপি কর্মীদের মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজয় মিছিল থেকে ফেরার পথে তাদের কর্মী সমর্থকদেরই মারধর করেছেন বিজেপি কর্মীরা।
মঙ্গলবার সকালের ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে লোকপুর থানার রুপুসপুর গ্রামে। ‘হামলার’ প্রতিবাদে প্রায় দু’ঘণ্টা রুপুসপুর-লোকপুর সড়ক অবরোধ করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। পরে পুলিশ এসে দোষীদের ধরার আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়। এ দিন সকালেই সাঁইথিয়া থানার হরিশাড়া গ্রামে বিজেপি-র বিজয় মিছিল থেকে এক তৃণমূল নেতার ভাই-সহ পাঁচ জনকে মারধোরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সকালে লোকপুরে প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ উপলক্ষে তাদের বিজয় মিছিল ছিল। সেই মিছিলের জন্য রুপুসপুর গ্রাম থেকে জনা পঁচিশেক দলীয় কর্মী লোকপুর যান। বিজেপি-র অভিযোগ, মিছিল সেরে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁরা একটি পিক-আপ ভ্যানে চেপে রুপুসপুর ফিরছিলেন। সেই সময় লোকপুর থানার বারাবনের কাছে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শঙ্কর গঁড়াই, আইনুস, টুনটুনের নেতৃত্বে বেশ কিছু দুষ্কৃতী ওই বিজেপি কর্মীদের গাড়ি আটকায় এবং তাঁদের বেধড়ক মারধর করে। গাড়িও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিজেপি নেতা পুলক চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিজয় মিছিল সেরে ফেরার সময়য় আণাদের কর্মীদের মারধরের প্রতিবাদেই আমরা পথ অবরোধ করেছি। ঘটনায় ৬ জন বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন। আমরা পুরো ঘটনা থানায় অভিযোগ জানাব।’’
বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, এ দিন মিছিল থেকে ফেরার সময় বিজেপি কর্মীরাই তৃণমূল কর্মীদের মারধর করেন। এমনকি দলের বুথ সভাপতির বাড়ি ঘিরে হামলা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল নেতা শঙ্কর গঁড়াইয়ের। তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমরা কোনও রকম হামলা করিনি। বরং ওদের কর্মীরাই মিছিল থেকে ফেরার পথে আমাদের দু’জন কর্মীকে মারধর করে এবং এক জনের বাড়ি ঘিরে হামলা চালায়। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ করব।’’
ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘এই সন্ত্রাসের কারণেই রাজ্যের মানুষ তৃণমূল থেকে মুখে ফিরিয়ে নিয়েছেন। ওরা ভাবছে বিজেপি কর্মীদের মেরে, ভয় দেখিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখবে। কিন্তু সেটা করতে পারবে না।’’ অন্য দিকে তৃণমূল নেতা তথা বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বিজেপি মিথ্যা অভিযোগ করছে। বরং আমার কাছে খবর আছে, ওরাই আমাদের দু’জন কর্মীকে মারধর করেছে।’’
সাঁইথিয়ার হরিশাড়ায় আবার বিজেপি-র বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। এ দিন ওই এলাকায় বিজেপির বিজয় মিছিল ছিল। তৃণমূলের হরিশাড়া অঞ্চল কমিটির সম্পাদক চিন্ময় ঘোষের অভিযোগ, ‘‘আমি, আমার ভাই মণিরঞ্জন-সহ বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মী আমাদের পোল্ট্রিতে বসেছিলাম। সেই সময় বিজেপির মিছিল গ্রাম দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সেই মিছিল থেকে কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক লাঠি-রড নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হয়। তারা আমাকে মারতে থাকে। আমাকে বাঁচাতে গেলে আমার ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দেযওয়া হয়। আরও কয়েক জন হামলায় আহত হয়।’’
আহতদের মধ্যে মণিরঞ্জন সহ তিন জনকে সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির হরিশাড়া অঞ্চল কমিটির সভাপতি সুজিত মালের পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূলের লোকেরাই আমাদের মিছিলের উপরে হামলা চালায়। আমরা সেই আক্রমণ প্রতিহত করেছি মাত্র।’’ পুলিশ জানায়, এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।