তৃণমূল আর বিজেপি-র লড়াইয়ে ফের তেতে উঠছে লালমাটি। জেলায় দু’দলের সংঘাত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বীরভূমে তারা যে টক্কর দিতে প্রস্তুত শাসকদলকে, সোমবার এক মিছিলেই তা বুঝিয়ে দিল বিজেপি!
জেলার সদর শহর সিউড়িতে এ দিন বিজেপি যে মিছিল করল, তা সাম্প্রতিক অতীতে তাদের সব মিছিলকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এ কথা বলছেন বিজেপি-র জেলা নেতারাই। সিউড়ির পথ এ দিন ছিল পদ্মফুল দেওয়া গেরুয়া পতাকায় ছয়লাপ। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের উপস্থিতিতে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ের একেবারে ধার ঘেঁষে যাওয়া ওই মহামিছিল ছাপিয়ে গেল গত রবিবারে তৃণমূলের শান্তি মিছিলকেও।
গত ১১ এপ্রিল একটি ধর্মীয় সংগঠনের ডাকা হনুমান জয়ন্তীর মিছিলের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে সোমবার মহামিছিলের আয়োজন করেছিল বিজেপি। আদতে নিজেদের ক্ষমতা দেখানোই ছিল চ্যালেঞ্জ। দিনের ব্যস্ত সময়ে সেই প্রতিবাদ মিছিল যে সাড়া মিলেছে, তাতেই উজ্জীবিত গেরুয়া শিবির। এ দিন বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মিছিল করার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। সে ভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিল বিজেপি। বহু কর্মী-সমর্থক গাড়িতে চেপে বা অনেকে মিছিল করে সিউড়ির চাঁদমারি মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। মিছিল শুরু হয় পৌনে ১২টা নাগাদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পৌঁছন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায়। মিছিলের একদম সামনে ছিলেন তাঁরা। রাস্তা ছেয়ে যায় গেরুয়ায়।
বিজেপি-র দাবি, শাসকদলের চাপে প্রথমে মাহমিছিলের অনুমতি দিতে চায়নি প্রশাসন। বহু জায়গায় তাদের কর্মী-সমর্থকদের মিছিলে যোগ দিতে বাধাও দিয়েছে তৃণমূল। বায়না করা বাস আটকে দেওয়া হয়েছে। তবু ২০ হাজারেরও বেশি মানুষে মিছিলে পা মিলিয়েছে বলে দাবি জেলা বিজেপি নেতাদের। তৃণমূল সেই দাবি মানতে নারাজ। বিজেপি সাম্প্রদায়িক সুস্থিরতা নষ্ট করছে, এই অভিযোগে গত রবিবার সিউড়িতে শান্তি মিছিল করে তৃণমূল। জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী-সহ জেলার প্রথম সারির নেতাদের উপস্থিতে ভালই ভিড় হয়েছিল। সে দিন তৃণমূলের মিছিল যে পথ ধরে এগিয়েছিল, এ দিন বিজেপি-র মিছিল ঠিক সেই পথেই এগিয়েছে।
পুলিশ থেকে প্রত্যক্ষদর্শী, সকলেই মানছেন, বিজেপি-র মিছিলের ভিড় ছাপিয়ে গিয়েছে তৃণমূলকে। পুলিশের একাংশের দাবি, এ দিনের মিছিলে লোকসংখ্যা ছিল হাজার ১৫। মিছিল থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠে। পুলিশের লাঠিচার্জের বিরদ্ধে মিছিল হলেও মঞ্চ থেকে পুলিশকে আক্রমণ না করে শাসকদলকেই নিশানা করেন নেতারা। মিছিল শেষে সিউড়ি জেলা স্কুলের মাঠে জমায়েত দেখে উচ্ছ্বসিত কৈলাস বিজয়বর্গীয় রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উৎখাতের ডাকই দিয়ে ফেললেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উপরে মানুষের
রোষ তৈরি হয়েছে। এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রোষ, গরিব মানুষের টাকা চিটফান্ডের মাধ্যমে নেতামন্ত্রীদের আত্মসাৎ করার রোষ। সাধারণ মানুষের এই রোষকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে হঠাতে হবে।’’ তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘আমরা গুণ্ডাগিরির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। তার জন্য যদি তরোয়াল ধরতে হয়, গলা ধরতে হয়, বন্দুক ধরতে হয়— তাই ধরব।’’
ঘটনা হল, এখনও এই জেলায় তেমন মজবুত নয় বিজেপি-র সংগঠন। বিধানসভা নির্বাচনেও তারা পর্যুদস্ত হয়েছে। তার পরেও কী ভাবে এত লোকের মিছিল করল তারা, সে প্রশ্ন ঘুরছে জেলা তৃণমূলের অন্দরেই। মিছিলে যোগদানকারীদের বড় অংশই তরুণ প্রজন্ম। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, শাসকদলের অপসাশনের বিরুদ্ধে একজোট হতে সিপিএম, কংগ্রেস তো বটেই, তৃণমূল ছেড়েও বহু মানুষ তাঁদের দিকে ঝুঁকেছেন। এবং আগামী দিনে এই শক্তি ক্রমশ বাড়বে।
বিজেপি-র মিছিল বা তাদের নেতাদের গা গরম করা বক্তৃতাকে বিশেষ পাত্তা দিতে চাননি জেলা তৃণমূল সভাপতি। বিজেপি নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাইরে থেকে এসে অনেকে অনেক কথা বলেন। দিলীপ ঘোষকে আমি চ্যালেঞ্জ করছি। কিছু করার থাকলে মাঠে নেমে করে দেখান!’’