বিধায়ক চন্দনা বাউরিকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে জোর উত্তেজনা বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থানার নিধিরামপুর গ্রামে। বুধবার সকালে বাড়ির অদূরে নিধিরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে একটি বটগাছের ডালে নাইলন দড়িতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় শুভদীপ মিশ্র নামে ওই বিজেপি কর্মীকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রকৃত তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। ঘটনাস্থলে গঙ্গাজলঘাটি থানার পুলিশ গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভে শুরু করেন এলাকাবাসী। পুলিশ কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানানো হয়। এ ভাবে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে দেহ আটকে রেখে চলে বিক্ষোভ। তার পর ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ দেহ নিতে গিলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে।
স্থানীয় সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন শুভদীপ ওরফে দীপু। এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে তাঁর। অন্যের বিপদ-আপদে সবার আগে গ্রামবাসীরা তাঁকে কাছে পেতেন। কিন্তু দিন সাতেক আগে হঠাৎই উধাও হয়ে যান দীপু। অভিযোগ ওঠে, ওই বিজেপি কর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল প্রতিবেশী এক বধূর। এই নিয়ে নাকি অশান্তি শুরু হয়। বধূর শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ির তরফে দীপুকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিলও বলে অভিযোগ। এবং এ জন্যই সাত দিন আগে দীপু বাড়ি ছাড়েন। মৃত বিজেপি কর্মীর আত্মীয় সৌমেন দুবে বলেন, ‘‘দীপুকে খুন করা হয়েছে। প্রতিবেশী মহিলার পরিবারের তরফে বহু বার তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এ বার তারাই মেরে ফেলেছে। আমরা তাদের প্রত্যেকের কঠোর শাস্তি চাই।’’
বিজেপি কর্মীর পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার দীপু বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু বুধবার ভোরে বাড়ির অদূরে প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে থাকা একটি বটগাছের ডালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান এলাকাবাসী। ওই যুবককে প্রতিবেশী মহিলার আত্মীয়েরাই খুন করেছেন, এমন অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা। দোষীদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে, এই দাবি তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামের মানুষ। ভাঙচুর করা হয় প্রতিবেশী ওই মহিলার বাড়িও। ওই মহিলা-সহ তাঁর পরিবারের তিন জনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসীরা প্রথমে বাধা দেন। খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে গিয়েছেন শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরি এবং তৃণমূলের গঙ্গাজলঘাটি-২ নম্বর সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি নিমাই মাজি। বিধায়ক বলেন, ‘‘পরিবারের দাবি, দীপুকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্তে ঢিলেমি করছে। এতেই পরিষ্কার যে এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কারণ থাকলেও থাকতে পারে।’’ পরে মৃতের গলা থেকে ফাঁস খুলে দেহ গাড়িতে চাপিয়ে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই শালতোড়ার বিধায়ক পুলিশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। বিক্ষোভে শামিল হন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ পাঁজাকোলা করে বিধায়ককে সরিয়ে দেয়। চন্দনার অভিযোগ, ‘‘পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে। আমি তদন্তের দাবি জানালে আমাকেও হেনস্থা করেছে পুলিশ। রাজ্যে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। আমরা তদন্তের দাবি থেকে নড়ছি না। এর পর আমরা গঙ্গাজলঘাটি থানা ঘেরাও করব। প্রয়োজনে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখব।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল নেতা নিমাই মাজি বলেন, ‘‘ঘটনা আত্মহত্যা কি না, তা তো তদন্তেই বোঝা যাবে। পারিবারিক কারণেই এই ঘটনা বলে আমার ধারণা। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’