অযোধ্যা রামমন্দির। —ফাইল চিত্র।
২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই উদ্বোধনে অংশ নেবেন। নিমন্ত্রিতের তালিকায় অনেকে থাকলেও সে দিন বীরভূম থেকে কেউ উপস্থিত থাকবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। তবে রামমন্দির দর্শনে বীরভূম থেকে যাঁদের অযোধ্যায় যাওয়ার কথা, তাঁরা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যাবেন। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, রামমন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে পরে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে উপরতলা থেকেই। যাওয়ার বদলে সে দিন জেলায় ওই বিশেষ মূহুর্তকে উদ্যাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরএসএস-এর জেলা কার্যবাহ (দক্ষিণ বীরভূম) সুপ্রিয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যবঙ্গ থেকে ১,৫০০ জন (মূলত করসেবক এবং স্বয়ং সেবকরা) বিশেষ ট্রেনে অযোধ্যায় রামলালা দর্শনে যাবেন। বীরভূম থেকে মোট ২২০ জন যাবেন। ইতিমধ্যেই তাঁদের টিকিট কাটা হয়েছে।’’
রামমন্দির উদ্বোধন ঘিরে লোকসভা নির্বাচনের আগে জনমানসে উন্মাদনা তৈরিতে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না গেরুয়া শিবির। অযোধ্যা থেকে কলসি ভর্তি হলুদ ‘অক্ষত’ চাল বেশ কিছু দিন আগেই পৌঁছেছে বীরভূমে। সাধারণ চালে হলুদ ও ঘি মাখিয়ে তৈরি ‘অক্ষত’ চাল। সেই চাল নিয়ে লক্ষাধিক বাড়ি নিমন্ত্রণ কর্মসূচি চলছে।
জেলা বিজেপির নেতারা জানিয়েছেন, পয়লা জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, এবিভিপি, মূল বিজেপির নেতা, কর্মী— সকলেই ওই ‘গৃহসম্পর্ক’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। কোনও ব্যানারে নয়, রামভক্ত বা সেবক হিসেবে ছোট ছোট প্যাকেটে ‘অক্ষত’ চাল, আমন্ত্রণ পত্র ও রামলালার ছবি নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছচ্ছেন।
যদিও রামমন্দির দর্শনের নিমন্ত্রণ করলেও ২২ জানুয়ারি কাউকে সেখানে যেতে বলা হয়নি। পরে অযোধ্যায় গিয়ে রামমন্দির দর্শনের আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি ‘সনাতনী’ সংস্কৃতি অনুয়ায়ী ২২ জানুয়ারি টিভিতে মন্দির উদ্বোধন প্রত্যক্ষ করা এবং বাড়িতে শঙ্খ, উলুধ্বনি ও পাঁচটি করে মাটির প্রদীপ জ্বালাতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সুপ্রিয় জানাচ্ছেন, জেলার প্রতিটি মঠ এবং মন্দিরেও সে দিন অনুষ্ঠান হবে।
তবে অযোধ্যায় রামমন্দির দর্শনের জন্য সবচেয়ে আবেগ তাড়িত করসেবকেরা। যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯২ সালে করসেবা করতে গিয়েছিলেন তা চক্ষুষ করা ভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করছেন জেলার করসেবকেরা। তবে তাঁদের অভিযোগ, অযোধ্যা থেকে ফিরে পুলিশ ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন বামেদের যে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল সে কথা ভোলার নয়।
জালর করসেবকদের মধ্যে অন্যতম দুধকুমার মণ্ডল এবং কালোসোনা মণ্ডল । দুধকুমার বলেন, ‘‘১৯৯২ সালে ১০ ডিসেম্বর বর্ধমান স্টেশনে নামার পরেই শ্রমিক সংগঠনের অফিসে নিয়ে গিয়ে আমাকে মারধর করা হয়। বহু কষ্টে ফেরার পরে গ্রেফতার হয়েছিলাম। জেল খাটতে হয়েছিল।’’ অন্য দিকে, করসেবা করে ১০ ডিসেম্বর বাড়ি ফেরার পরে রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে জানান কালোসোনা মণ্ডল। উভয়েই বলেন, ‘‘করসবেকদের অনেকে বেঁচে নেই। বহু লড়াইয়ের পর সেই রামমন্দির তৈরি হয়েছে। সেটা দর্শন করব। এই অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা নেই।’’