মিছিলে শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু, তিনি সেখানে ‘হারবেন’ বলে দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সিউড়ি সংলগ্ন পুরন্দরপুরে এক সাধুর মৃত্যুর প্রতিবাদে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে এসে শুভেন্দু কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেখানে তিনি হেরেছেন। এখন বীরভূমের দায়িত্ব নিয়েছেন, সেখানেও হারবেন।’’ প্রসঙ্গত, চলতি জানুয়ারিতে বোলপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তিনি নিজে বীরভূমে দলের সংগঠন দেখবেন।
গত ২৩ এপ্রিল সকালে পুরন্দরপুরের বেহিরা কালীতলা সংলগ্ন একটি বেল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ভুবন মণ্ডল ওরফে ভুবন সাধুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ ছিল ভুবন সাধুকে খুন করা হয়েছে। মৃতের ভাই খুনের লিখিত অভিযোগও করেন পুলিশের কাছে। যদিও পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, ভুবনের ব্যাগ থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়, যেখানে লেখা মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। এই ঘটনায় রাজনীতির রং লাগে। বিজেপির জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার দাবি তোলে। সেই সূত্র ধরেই এ দিন ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি যাত্রা’ করেন শুভেন্দু। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকে এসেছিলেন এই যাত্রায় শামিল হতে।
বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত থাকলেও এটি কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। সেই মতো এ দিনের পদযাত্রায় বিজেপির দলীয় পতাকা চোখে পড়েনি। বিকেল ৫টা নাগাদ বেহিরা কালীতলায় প্রণাম করে ও মন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলে পুরন্দরপুর হাটতলায় উপস্থিত হয় শুভেন্দুর কনভয়। সেখান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে একটি ফাঁকা মাঠের ধারে পথসভার মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেখানে শুভেন্দু সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। মৃতের পরিবারকে আইনি ও আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন। পথসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন মৃতের দাদা চন্দন মণ্ডলও। শুভেন্দু পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যদিও জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় এই শুভেন্দুর বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং সুইসাইড নোটের ফরেন্সিক রিপোর্ট জেলা পুলিশের হাতে আসেনি। সেগুলি এলে তবেই পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।
সভার শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু দাবি করেন, বীরভূমের সমস্ত চোরই তিহাড় জেলে যাবে। শুধু তৃণমূলের নেতারাই নন, পুলিশের একাধিক কর্তাব্যক্তিও দ্রুত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে যাবেন বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর ঘন ঘন বীরভূম সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শুভেন্দু জানান, ফের তিনি আসবেন। তাঁর আরও দাবি, ‘‘কোনও সম্প্রদায়ের লোকই রাজ্যে হিংসা চান না। রাজ্যে হিংসা চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ তিনি চাকরি দিতে পারেননি, শিল্প দিতে পারেননি।” শুভেন্দুর এ দিনের সভাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “উনি যেটা করছেন, সেটা রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিপন্থী। ওঁর জানা উচিত, সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে প্রভাবিত করা যাবে না।”