দুধকুমার মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
উস্কানিমূলক কথাবার্তার অভিযোগে তিনি একসময়ে পাল্লা দিতেন তৃণমূলের বীরভূমে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে। তার পরেও নিজের দলেই ক্রমশ কোণঠাসা হওয়া, রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস গ্রহণের ঘোষণা, তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা-সহ নানা বিষয়ে বীরভূমের রাজনীতির চর্চায় থেকেছে তাঁর নাম।
তিনি, বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডল এ বার যাবতীয় ‘খোলস’ ছেড়ে ফের নামলেন পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে। মনোনয়নপত্রও জমা দিলেন। জানালেন, লড়বেন বিজেপির প্রতীকেই। তবে তাঁর দাবি, ভোটে দাঁড়িয়েছেন গ্রামের মানুষের অনুরোধে! ভোটযুদ্ধে নেমেই তিনি পুরনো মেজাজে নিশানা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। দুধকুমার বলেন, ‘‘সব জায়গায় তৃণমূল সন্ত্রাস করছে। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করছে। কিন্তু বিজেপি লড়াই করতে প্রস্তুত।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রের মন্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক প্রচারের জন্যই এ সব বলা হচ্ছে।’’
বামফ্রন্ট আমল থেকেই শাসক-বিরোধী রাজনীতির পরিচিত মুখ দুধকুমার। বর্তমানে কুণ্ডলা পঞ্চায়েতের কোটাসুর মদনেশ্বরতলা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হলেও, তাঁর আদিবাড়ি ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণবহড়া গ্রামে। তিনি এখনও সেই গ্রামের ভোটার। ওই পঞ্চায়েত এখন বিজেপির দখলে। সেই পঞ্চায়েতেরই ৬ নম্বর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিেছেন দুধকুমার।
গত পুরভোটের সময় জেলা বিজেপির সভাপতি ছিলেন দুধকুমার। সেই সময় তাঁর সঙ্গে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘তরজা’য় উত্তাপ ছড়িয়েছিল জেলায়, গোটা রাজ্যে। তবে ২০১৫ সাল থেকে তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। বিজেপির অন্দরমহলের খবর, গত পুরভোটে প্রার্থী বাছাই নিয়ে রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান দুধকুমার। তাঁকে ওই পদে ফেরানোর দাবিতে অনুগামীরা লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্ব দুধকুমারের বিরোধী হিসেবে পরিচিত অর্জুন সাহাকে জেলা আহ্বায়কের পদে বসান। পরে তাঁকেই জেলা সভাপতি করা হয়। তার পর থেকেই দুধকুমার ও তাঁর অনুগামীরা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। সেই সময় বিজেপির রাজ্য সভাপতি হন দিলীপ ঘোষ। তার পরপরই জেলা সভাপতি হিসেবে দুধকুমারের বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত রামকৃষ্ণ রায়ের নাম ঘোষণা করা হয়। এমনকী নতুন জেলা কমিটিতেও ঠাঁই হয়নি দুধকুমারের। মেলেনি দলের অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ। এর পরেই ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। দলে থাকলে তাঁর অবস্থা কিষেণজির মতো হত বলেও মন্তব্য করেন। দুধকুমার তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, এমন জল্পনাও ছড়িয়েছিল জেলায়। কিন্তু ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ দলের অনেককে কোটাসুরে তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করতে দেখা যায়। তার পরই দলে ফেরার কথা ঘোষণা
করেন দুধকুমার।
দলে ফিরলেও সেই সময় ঘরে ফেরা হয়নি। ময়ূরেশ্বরের বদলে তাঁকে প্রার্থী করা হয় রামপুরহাটে। ময়ূরেশ্বরে লড়েন লকেট। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন তাঁকে কার্যত ঘরে ফেরাল। দুধকুমারের কথাতে তারই ইঙ্গিত। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের অনুরোধেই নিজের গ্রামে লড়তে নামলাম। সবাই বললেন, তুমি আবার পঞ্চায়েত থেকেই শুরু করো। সেই অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারিনি।’’