শাসক দলের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে মিছিল বিজেপির
তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চটকদার বার্তা দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। কংগ্রেস, সিপিএম এমনকি তৃণমূলের ‘সৎ’ নেতাদেরও বিজেপির ঝান্ডার নীচে এসে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে জোট গড়ার ডাক দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। একই সুর শোনা গেল বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁর গলাতেও। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামেদের পাশে পাওয়ায় আহ্বান জানালেন তিনি। সৌমিত্রের ওই মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। উল্টে সাংসদকেই ‘পাল্টিবাজ’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। অন্য দিকে, তৃণমূল ‘রাম-বাম’ জোট তত্ত্বের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি ও সিপিএম দুই দলকেই বিঁধেছে।
রবিবার বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের রতনপুর এলাকায় ‘চোর ধরো জেল ভরো’ কর্মসূচির ডাক দেয় বিজেপি। মিছিলের পর আয়োজিত পথসভা থেকে সৌমিত্র বলেন, ‘‘প্রকাশ কারাট ও সীতারাম ইয়েচুরিদের ভুলের জন্য সিপিএম এ রাজ্য থেকে বিদায় নিয়েছে। বিধানসভায় আজ সিপিএমের আসন সংখ্যা শূন্য। সিপিএম নেতাদের কাছে এখন আমাদের আহ্বান, এ রাজ্যে থেকে তৃণমূলকে হঠাতে আমার সবাই মিলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করি।’’ সিপিএমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আসুন, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওন্দা পঞ্চায়েতন সমিতিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে মাঠে নামি। চোরের বিরুদ্ধে আমরা সবাই লড়াই করি।’’
ঘটনাচক্রে, দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্তও দিন চারেক আগে সব রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার তলায় এসে লড়ার ডাক দিয়েছিলেন। নেটমাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, ‘...আমি তো বলিনি কংগ্রেসের ঝান্ডা নিয়ে, সিপিএমের ঝান্ডা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে জোট করতে। আমরা সেই দলের কর্মীদের, এমনকি, তৃণমূলের মধ্যেও যাঁরা সৎ আছেন, তাঁদের বলছি আপনারা রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে বিজেপির ঝান্ডা ধরুন। আগে সরকারটা পাল্টান। তার পর মনে হলে, যে যাঁর দলে ফিরে যাবেন!’ সুকান্তের এই বক্তব্য নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছিল সব রাজনৈতিক দলই। ওই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে দিয়ে কার্যত হোঁচট খেতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি নেতাদেরও। তার পরেও সুকান্তের সুরেই সুর মেলালেন সৌমিত্র। তবে তিনি সুকান্তের মতো পদ্ম-পতাকা হাতে নিয়ে জোটের কথা বলতে চেয়েছেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট হয়নি।
বিষ্ণুপুরের সাংসদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অভয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ রাজ্যের পাল্টিবাজের রাজনীতির অন্যতম নায়ক সৌমিত্র। উনি বামপন্থীদের চেনেন না বলেই এ কথা কথা বলছেন। আমরা মনে করি, সারা দেশে মানুষের প্রধান শত্রু বিজেপি। বিজেপি কেমন, তা মানুষ বুঝে গিয়েছে। বিজেপিও বুঝে গিয়েছে, ভোটে হালে পানি পাবে না ওরা। সৌমিত্ররা এখন ভয় পেয়েই এ কথা কথা বলছেন। আমরা এ রাজ্য থেকে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপিকেও তাড়াব। আর চোরের দল তৃণমূলকেও তাড়াব।”
তৃণমূলের তরফেও কটাক্ষ করে বলা হয়, বিজেপি একার ক্ষমতায় তৃণমূলের সঙ্গে পেরে উঠবে না বলেই বার বার জোটের ডাক দিচ্ছে। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিষ্ণুপুরের সাংসদ মাঝেমধ্যে এখানে বেড়াতে আসেন। এ বার বেড়াতে এসে উনি সঠিক কথাই বলেছেন। কারণ, উনি বুঝে গিয়েছেন, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি লড়াই করতে পারবে না। গত লোকসভা নির্বাচনে বাম-রাম জোট হয়েছিল। বামেরাই ভিতরে ভিতরে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল। এখন সেই বিষয়টাই সাংসদ প্রকাশ্যে বলে ফেলেছেন।”