প্রতীকী ছবি।
বাড়িতে বসে নয়। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে। বিধানসভা ভোটকে নজরে রেখে জনসংযোগ বাড়াতে জেলা তৃণমূল এই কৌশলই নিতে চাইছে বলে দল সূত্রে খবর।
তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, চলতি মাসে বোলপুরের জেলা কমিটির বৈঠক করেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সেখানেই আগামী বিধানসভা ভোটে নিজেদের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন তৃণমূলের নেতারা। ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ নেওয়া,
তাঁরা সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন কি না সেই নিয়ে কথা বলা ও রাজ্য সরকারের যে সমস্ত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রয়েছে সেই বিষয়ে মানুষকে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘দাদার (অনুব্রত) স্পষ্ট বার্তা, বাড়ি বসে রাজনীতি করা যাবে না। যদি কেউ পদ আগলে রেখে বাড়ি বসে রাজনীতি করেন তাহলে তাঁকে সরিয়ে বিকল্প কাউকে পদে বসানো হবে।’’
তৃণমূলের অন্দরের খবর, জেলার বিজেপির উত্থানের পিছনে শাসক দলের নেতাদের একাংশের প্রকাশ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কিছু নেতার ঔদ্ধত্য এবং দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন দলের কিছু নেতা। যদিও প্রকাশ্যে এই নিয়ে কিছু বলতে নারাজ দলের জেলা স্তরের নেতারা। লোকসভা ভোটের আগে প্রত্যেক বিধানসভায় বিধানসভা ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। সেখানে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্লক সভাপতিদের কত ভোটে লিড থাকবে সেই নিয়েও জানতে চান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার দাবি, ‘‘কিছু নেতা নিজের এলাকার খোঁজ খবর না জেনেই বলে দিয়েছিলেন যে তাঁর এলাকায় এত ভোটে লিড হবে৷ কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা যায় ওই এলাকাগুলিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এরপরেই কারণ খুঁজতে ওই সমস্ত দিকগুলি নজরে আসে জেলা স্তরের নেতাদের।’’
সংগঠনের সেই ‘ফাঁক’ই পূরণ করতে চায় রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূল সূত্রে খবর, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কী কী নিয়ে কথা বলা হবে তাও ঠিক করা হয়েছে। যেমন, আমপানের রাজ্যে ক্ষতি হয়েছে এক লক্ষ কোটি টাকা কিন্তু কেন্দ্র মাত্র এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় দল পরিদর্শনের পরেও কোন সহায়তা করা হয় নি। রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে ২৫ কোটি টাকা ট্রেনের ভাড়া দিয়েছে, কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কিছু দেওয়া হয় নি।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য সরকারের দেওয়া চাল সম্বন্ধে ওই চাল কুকুর ছাগলে খায় বলেছিলেন বলে অভিযোগ তুলে সে কথাও প্রচার করার কথা বলা হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, এই মন্তব্যের দ্বারা তিনি পশ্চিমবঙ্গবাসীকে অপমান করেছেন। বিজেপির বিভিন্ন ‘অপপ্রচারের’ জবাব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি অভিজিৎ সিংহের কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণের কারণে মিটিং মিছিল বা জনসভার মাধ্যমে আমরা আমাদের দলের কথা তুলে ধরতে পারছি না। তাই আমাদের নেতা কর্মীদেরই মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। দলের নির্দেশ না মানলে সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এটা পরিষ্কার বলা হয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি সম্পর্কে সারা রাজ্যবাসী জানে। তাই বাড়ি বাড়ি প্রচার করেও কোনও লাভ হবে না। মানুষ ঠিক সময়ে বুঝিয়ে দেবে কে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তৃণমূল না বিজেপি।’’