বামফ্রন্টের শরিক দল ‘ভারতের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি’র (আরসিপিআই) বীরভূম জেলা নেতৃত্ব দলেরই রাজ্য নেতৃত্বর প্রতি ক্ষোভ উগরে গিয়ে দল ছাড়ার কথা জানালেন। সোমবার দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সাত সদস্যের মধ্যে জেলা সম্পাদক সহ ছ’জন সদস্য দল ছাড়ার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন। আরসিপিআই নেতৃত্বেরই দাবি, এই পদত্যাগের ফলে বীরভূমে ভারতের বিপ্লবী কমিউনিস্ট দলের আর অস্তিত্ব থাকল না।
সোমবার রামপুরহাটে আরসিপিআই দলের জেলা সম্পাদক কামাল হাসান নিজের বাড়িতেই সাংবাদিক বৈঠক করে দলত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। কামাল হাসানের সঙ্গে ছিলেন দলের সাত জেলা কমিটির পাঁচ সদস্যও। বীরভূমে কেবলমাত্র হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রে আরসিপিআইয়ের অস্তিত্ব ছিল। ১৯৭১ সালে হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রে আরসিপিআই-এর হয়ে ত্রিলোচন মাল প্রথম জয়ী হন। পরে বাম আমলে ১৯৭৭, ১৯৮২, ১৯৯১ সালে হাঁসন কেন্দ্র আরসিপিআই জয়ী হয়।
হাঁসন কেন্দ্রে একাধিক বার আরসিপিআই বাম শরিক দল হিসেবে বিধায়ক পেলেও বীরভূমের কোথাও তেমন সংগঠন করতে পারেনি বলে স্বীকার করেন দলের নেতারাই। হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতি এবং নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতিতেও আরসিপিআই জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বাড়াতে পারেনি। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দু’টি পঞ্চায়েত সমিতিতে মাত্র দু’জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুটি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে মোট ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সাত গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বামফ্রন্টের শরিক হিসাবে সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি-র উপরে নির্ভর করে বাম আমলে হাঁসন কেন্দ্রে একাধিকবার আরসিপিআই জয়ী হয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আবার হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্র জোট প্রার্থী হিসাবে কংগ্রেস প্রার্থীকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এরপর থেকেই দলীয় কর্মীদের মধ্যে রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ জমতে থাকে। অনেকেই প্রতীক বিহীন দল করে কী হবে, এই নিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন তোলেন। জমছিল পাহাড় প্রমাণ আক্ষেপও। সেই প্রেক্ষাপটেই নেতৃত্বের দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত বলে অনেকের মত।
আরসিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক কামাল হাসান সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, রাজ্য নেতৃত্ব দলের কর্মীদের দিশা দিতে পারছিলেন না। তেমন গণ-আন্দোলনও হচ্ছিল না। নানা বিষয়ে নীচুতলার দলীয় কর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি পারেননি বলেও অকপটে জানিয়েছেন। কামালের কথায়, ‘‘২০১১ সালে যে দলের গুটি কতক সদস্য ছিল, সেটা সাত বছরে তিনশো হয়েছে। তারপরেও গণ আন্দোলনের ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্ব দলীয় কর্মীদের কোনও দিশা দিতে পারেননি। সেই কারণেই আজ বীরভূমে দলের ৯০ শতাংশ কর্মী দলত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।’’
নতুন কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন?
দলত্যাগের পরে নেতৃত্ব জানিয়েছেন, বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের নীতি তাঁদের পছন্দের নয়। ফলে আগামী দিনে বাম রাজনীতিতেই থাকতে চান তাঁরা। তবে কোন দল সেটা এখনই ভাঙতে চাননি তাঁরা। দল ভাঙা, জেলা নেতৃত্বের পদত্যাগের প্রশ্নে আরসিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সুভাষ রায় বলেন, ‘‘কামাল হাসানকে দিন সাতেক আগে দলবিরোধী কাজের জন্য শো-কজ করা হয়েছে। আর কিছু জানা নেই।’’