শহিদ সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গেট। দুবরাজপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
দলের ‘শহিদ দিবস’-এ যোগ দিতে জেলা থেকে ২১ জুলাই কলকাতা যাবেন দেড় লক্ষ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। এমন লক্ষ্যই স্থির করেছে দল। তবে তাঁদের কলকতা নিয়ে যেতে বাস নয়, মূলত ট্রেন ও ছোট গাড়িই ভরসা জেলা তৃণমূলের।
গতবার ২১ জুলাই যোগ দিতে তিনশোরও বেশি বাস নেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল ও বিভিন্ন বাস মালিক সংগঠন সূত্রে খবর, এ বছর জেলা থেকে যাচ্ছে মাত্র ৩০-৪০টি বাস। তা টেনেটুনে ৫০ করার চেষ্টা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার বিভিন্ন বাস সংগঠনের নেতাদের দাবি, অন্যান্য বার (কোভিডের দু’টি বছর বাদ দিলে) শয়ে শয়ে বাস নিত শাসকদল। এ বারে ব্যতিক্রম। বোলপুর মহকুমায় কিছু বাস নেওয়া হলেও রামপুরহাট এবং সিউড়ি মহকুমায় সেই সংখ্যা তলানিতে। প্রশ্ন উঠেছে, অনুব্রত মণ্ডল নেই বলেই কি বাসের সংখ্যা কমল?
জেলা তৃণমূলের একাংশ আড়ালে সে কথা মানছেন। তাঁদের বক্তব্য,অনুব্ত থাকাকালীন এই সব খরচ নিয়ে ভাবতে হত না। এখন পরিস্থিতি আলাদা। সবে পঞ্চায়েত নির্বাচন পার হল। হাতে টাকা কম। বাস ভাড়া করতে যে পরিমাণ খরচ হবে, সেটা আন্দাজ করেই পিছিয়ে আসতে হয়েছে। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার কোর কমিটির বৈঠকেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে, জেলার যে অংশে রেল যোগাযোগ নেই, একান্ত প্রয়োজন হলে সেখানে বাস চাইতে পারেন সেখানকার নেতারা। মূল লক্ষ্য কলকাতায় যাওয়া। বাস, ট্রেন না ছোটগাড়ি, বিবেচ্য নয়।’’
বাস মালিক সংগঠনের কর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া। জেলা থেকে কলকাতা যেতে রুটের বাসগুলিতে কমপক্ষে ১৮ হাজার টাকা ভাড়া লাগবে। লাক্সারি বাস হলে, সেই খরচ ২২-২৫ হাজার টাকা। তৃণমূলের হিসেব, গত বারের সংখ্যা বাস নিতে হলে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা খরচ। এই বিপুল ব্যয়ের দায়িত্ব নেবে কে, মূলত সেই প্রশ্ন এড়াতেই ভরসা ট্রেন এবং ছোট গাড়ি। আজ, বৃহস্পতিবার সিউড়ি থেকে হুল এক্সপ্রেস, জেলা থেকে কলকাতাগামী বিভিন্ন ট্রেন এবং ২১ তারিখ সকালের শিয়ালদহগামী মেমু ও ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে সওয়ার হবেন জেলা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা।
গতবার সিউড়ি ১ ব্লক থেকে ১২টি বাস গিয়েছিল। এ বার সেখানে একটি বাসও করা হয়নি জানিয়েছেন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রত্নাকর মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘সিউড়ি স্টেশন থেকে ট্রেন ও ছোট গাড়ি থাকছে।’’ প্রায় একই ছবি মহম্মদবাজার ব্লকের। গত বার ১৫টির মতো বাস ছিল। এ বার অধিকাংশ কর্মী সাঁইথিয়া ও সিউড়ি থেকে ট্রেনে যাবেন। প্রচুর ছোটগাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। রেল যোগাযোগ থেকে দূরে থাকা রাজনগর ব্লক থেকে গত বার ১০টি বাস দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেখানে বাসের সংখ্যা কমিয়ে ৫ করা হয়েছে জানিয়েছেন ব্লক সভাপতি সুকুমার সাধু। থাকছে ছোটগাড়িও। সিউড়ি ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আমার দু’টি পঞ্চায়েত এলাকা, যেখান থকে রেল যোগাযোগের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য বাস থাকছে। বাকি এলাকার কর্মীরা ট্রেনে যাবেন।’’
দুবরাজপুরের ব্লক নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক স্বপন মণ্ডল জানান, গত বার ৩০টি বাস গিয়েছিল। এ বার সেই সংখ্যা কমে পাঁচ। ছোটগাড়ি থাকছে। বাকিরা ট্রেনে যাবেন। খয়রাশোল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী জানান, মূলত ট্রেন ও ছোটগাড়িই ভরসা। মুরারই ২ ব্লকের সভাপতি আফতাবউদ্দিন (মন্টু) মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, প্রতিটি অঞ্চল থেকে অন্তত ১০০ জন কর্মী-সমর্থককে নিয়ে যাওয়া। তাঁরা আগের দিন বিকেল থেকে কলকাতাগামী ট্রেনে যাবেন।’’ যদিও দলেই প্রশ্ন উঠছে, এত সংখ্যক কর্মী-সমর্থককে কি কেবল কয়েকটি ট্রেনে পাঠানো সম্ভব।