রামপুরহাট মেডিক্যালে আনা হয়েছে ধৃত সমীর শেখকে। সোমবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
এত দিন যে অভিযোগ করছিলেন বগটুই গণহত্যায় নিহতদের পরিজন এবং গ্রামবাসীদের বড় অংশ, সেই অভিযোগই শোনা গেল গণহত্যায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখের শ্বশুর সমীর শেখের মুখে।
বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের নিহত উপপ্রধান ভাদু শেখের ঘনিষ্ঠ লালন শেখ গণহত্যার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সিবিআই। সেই গণহত্যার সূত্রেই সিবিআই রবিবার দুপুরে গ্রেফতার করে লালনের শ্বশুর সমীর শেখকে। গ্রেফতারের পরে বুকে ব্যথা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় সমীরের। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ভর্তি হওয়ার আগেই বলেছিলেন, ‘‘লালন আমার জামাই, সেটা আমার দুর্ভাগ্য।’’ সোমবার রামপুরহাট আদালতে সমীরকে নিয়ে আসা হয়। আদালতে প্রবেশ করার পথে সাংবাদিকদের কাছে সমীর দাবি করেন, ভাদু শেখকে খুন করেছে বগটুইয়ের পলাশ খান, নিউটন শেখরা। আর বগটুই গ্রামের এতগুলি বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে ভাদু অনুগামীরা।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ভাদু শেখ খুন এবং বগটুই কাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। ভাদু-খুনে এখনও পর্যন্ত ৬ জন গ্রেফতার হলেও পলাশ খান, নিউটন শেখ, সোনা শেখ, ছোট লালন শেখরা এখনও অধরা। আবার বগটুই গণহত্যা কাণ্ডে অভিযুক্ত ভাদু শেখের ছায়াসঙ্গী বড় লালন এখনও সিবিআইয়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মুম্বই থেকে তার ঘনিষ্ঠ চার জনকে অবশ্য সিবিআই দিন কয়েক আগেই পাকড়াও করেছে। কিন্তু, লালনের ধরা পড়াটা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অত্যন্ত জরুরি।
ভাদু শেখ খুনের পরের দিন সকালে বগটুই গ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সোনা শেখের বাড়ি থেকে আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া সাত জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সোমবার রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরিতে স্বজনহারা সেই সাতটি পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২১ মার্চ রাতের হামলায় নিহত হয়েছিলেন বানিরুল শেখের স্ত্রী, মেয়ে লিলি খাতুন ও জামাই কাজী সাজিদুর রহমান। মাদ্রাসা শিক্ষক সাজিদুরের বাড়ি নানুরে। এ দিন সাজিদুরের বাবা কাজী নজরুল এবং মা নুরনেহার বিবিও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রামপুরহাট মেডিক্যালে এসে নমুনা দেন। নমুনা নেওয়া হয় বানিরুল ও তাঁর ভাই মিহিলাল শেখের। আর এক নিহত রূপালি বিবির (সোনা শেখের স্ত্রী) ছেলে আসাদুল শেখেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
অন্যদিকে সোমবার সিবিআই তদন্তকারী দল রবিবার ভাদু শেখের বাড়িতে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তিন ঘণ্টারও বেশি সময় অভিযান চালিয়ে যে সমস্ত ডায়েরি এবং খাতাপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে সে ব্যাপারেই নিজেদের অস্থায়ী শিবিরে তদন্ত চালিয়েছে।