নদিয়ার মাজদিয়ায় গণনাকেন্দ্রে ছাপ্পার অভিযোগ নিয়ে শোরগোল পড়েছে। পুরুলিয়া আর বাঁকুড়াতেও এ বারে তেমনটাই অভিযোগ তুলল বিরোধীরা।
শুক্রবার বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার দলের তরফে বাঁকুড়া জেলাশাসকের দফতরে গণনাকেন্দ্রে ছাপ্পা ভোট পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের গণনা হয়েছে অনেক রাতে। বিভিন্ন গণনাকেন্দ্র থেকে বিকেলের মধ্যে আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, বেশ কিছু জায়গায় বিরোধীদের ভোট পাওয়া ব্যালটে ছাপ্পা দিয়ে সেগুলি বাতিল করা হয়েছে।” পাশাপাশি জেলা পরিষদ স্তরে আসন ভিত্তিক বাতিল ভোটের সংখ্যা কত, তা জানানোর দাবিও তোলা হয়েছে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “বিজেপির অভিযোগ পাইনি। অভিযোগপত্র পেলে খতিয়ে দেখে নিয়ম অনুযায়ী যা করার করব।”
অন্য দিকে, বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর শুক্রবার বলেন, ‘‘নিতুড়িয়া, কাশীপুর, হুড়া, পাড়া, বরাবাজার, বাঘমুণ্ডি ব্লকের গণনাকেন্দ্রে কারচুপি হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলে অভিযোগ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হব।” তবে সেই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল পুরুলিয়ার সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘সর্বত্রই গণনা শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার, গণনার দিন দুপুরে নিতুড়িয়া এবং কাশীপুরে হিসেবে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। শুক্রবার বিজেপি অভিযোগ করেছে, গণনার রাতে হুড়া, পাড়া, বরাবাজার ও বাঘমুণ্ডিতে গণনাকেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে কারচুপি করায় ওই ব্লকগুলির কয়েকটি জেলা পরিষদের আসনের ফল অন্যরকম হয়েছে। গোড়ায় গ্রামপঞ্চায়েতের গণনা হচ্ছিল। বিজেপির অভিযোগ, অনেক আসনে বিজেপি প্রার্থীদের জিততে দেখে গণনার গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বেলা ১টার মধ্যে রঘুনাথপুর কলেজে গ্রাম পঞ্চায়েতে গণনা শেষ হয়ে গেলেও বিকেল ৪টে পর্যন্ত পঞ্চায়েত সমিতির গণনা শুরু করা হয়নি বলে রাস্তা অবরোধ করে একপ্রস্ত বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বিজেপির কর্মীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগরবাবু বলেন, ‘‘প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সুকৌশলে তৃণমূল গণনায় দেরি করিয়েছে। ওরা চেয়েছিল গণনা চলতে চলতে গভীর রাত হয়ে যাক। তাহলে অন্ধকারে কারচুপি করতে সুবিধা হয়।’’ তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাতেও তাঁদের কর্মীরা সজাগ থাকায় কারচুপি হতে পারেনি বলে দাবি করছেন বিজেপির কিছু স্থানীয় নেতা।
এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানান, গণনা শুরু করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা হওয়ায় কিছুটা দেরী হয়েছিল। তা ছড়া ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ভোট হয়েছে ব্যালটে। অন্য বারের মতো এ বারও তাই গণনায় কিছুটা দেরি হয়েছে।’’ অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার সকালে গণনাকেন্দ্রের সামনে শাসকদলের শিবিরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ফল যত বেরিয়েছে, ভিড় বেশ কিছুটা কমেছে। রঘুনাথপুর ১, রঘুনাথপুর ২, সাঁতুড়ি ব্লকে রাত ৮টার পরে গণনাকেন্দ্রের সামনে শাসকদলের শিবির ছিল সুনসান। দল সূত্রে জানা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত সমিতির গণনার পরেই তৃণমূলের বহু প্রার্থী ও কাউন্টিং এজেন্ট ফল খারাপ হচ্ছে দেখে হতাশায় গণনাকেন্দ্র ছেড়েছিলেন। গভীর রাত পর্যন্ত বিজেপির শিবিরে ছিল ভিড়।
এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী-শূন্য হয়েছে বাঁকুড়া জেলা পরিষদ। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের অভিযোগ, রাতে জেলা পরিষদের ভোট গণনা চলাকালীন বিভিন্ন ব্লক থেকে বিজেপির এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়। বেশ কিছু টেবিলে তাঁদের কোনও এজেন্টকেই থাকতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “এজেন্টদের সরিয়ে বিজেপির পাওয়া ভোট বাতিল করতে ব্যালটে ছাপ্পা দেওয়া হয়েছে। এর জন্যই আশ্চর্য ভাবে কিছু কিছু কিছু বুথে তৃণমূলের ভোট প্রচুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
গণনাকেন্দ্রে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলছে সিপিএমও। দলের তরফে এ নিয়ে লিখিত ভাবে কোথাও অভিযোগ জানানো হয়নি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি শুক্রবার অভিযোগ করেন, রানিবাঁধের একটি জেলা পরিষদ আসনে তাঁদের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন দেখে পরে ব্যালটে ছাপ্পা দিয়ে ওই প্রার্থীর বহু ভোট বাতিল করে দেওয়া হয়। খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সুপুর এলাকার একটি আসনেও একই ভাবে সিপিএম প্রার্থীকে হারানো হয়েছে তাঁর অভিযোগ। অজিতবাবু বলেন, “বাতিল ভোটের সংখ্যা জানতে পারলেই প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ্যে আসবে। ঠিক ভাবে গণনা হলে শাসকদল এত আসন কোনও ভাবেই পেত না।”
প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, প্রতিটি গণনাকেন্দ্রেই হলের ইনচার্জের বসার আসনের পিছনে সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল। ওই ক্যামেরার ফুটেজে গণনাকেন্দ্রের টেবিলের ছবিও ধরা পড়ার কথা। কিছু গোলমাল হয়ে থাকলে সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই তা ধরা যেতে পারে বলেই জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। গণনাকেন্দ্রের ছাপ্পার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খান।
তিনি বলেন, “এই রাজ্যে ছাপ্পা ভোটের প্রচলন করেছিল সিপিএম। ওরাই এর কৌশল জানত। তৃণমূল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।” তাঁর কটাক্ষ, জেলা পরিষদে একটিও আসন জিততে না পারায় এই সমস্ত অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।