মিথিলা মাহাতো পুরুলিয়া ১ ব্লক কার্যালয়ে। ছবি: সুজিত মাহাতো।
গত আশ্বিনে ঝড়-জলে ঘর ভেঙে যাওয়ার পরে কখনও ত্রিপলের নীচে তো কখনও শৌচাগারে কাটছে দিন। পুরুলিয়া ১ ব্লকের ডুঁড়কু পঞ্চায়েতের সুন্দ্রাডি গ্রামের বাসিন্দা, বছর ছেষট্টির মিথিলা মাহাতোর দুর্দশার ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তৎপর হল ব্লক প্রশাসন। সোমবার ওই বৃদ্ধাকে পঞ্চায়েত মারফত ব্লক অফিসে ডেকে পাঠানো হয়।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কী ভাবে ওই বৃদ্ধার মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। তাঁর ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন ব্লক কার্যালয়ের ক্যান্টিনে তাঁকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। বিডিও মনোজকুমার মাইতি বলেন, “বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে তাঁর অবস্থার বিষয়ে জানলাম। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি রয়েছে। তাই চাইলেও প্রশাসন এখন কিছু করতে পারবে না। তবে বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানান, জেলায় আবাস প্লাস প্রকল্পের তালিকায় ৪৪৫৭৮ জন উপভোক্তার নাম রয়েছে। তাতে ওই বৃদ্ধার নাম রয়েছে কি না, সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন বলতে পারবে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে দাবি, তালিকায় নাম নেই ওই বৃদ্ধার। আবাসে বাড়ি পাওয়ার যোগ্য হলেও কেন তাঁর নাম নেই, সদুত্তর মিলছে না। উত্তর নেই পঞ্চায়েতের কাছেও। প্রাক্তন সিপিএম সদস্য তথা বৃদ্ধার পড়শি বিমল মাহাতোর দাবি, “এই সংসদে বিরোধীরা জেতে। তাই আমাদের কোনও দাবিতেই পঞ্চায়েত কান দেয় না।” অভিযোগ মানেনি পঞ্চায়েত।
বৃদ্ধা জানান, বাড়ি ধসে পড়ার পরে থেকে পঞ্চায়েতের তরফে কেবল একটি ত্রিপল জুটেছে। ঠান্ডা-বৃষ্টিতে ভরসা শৌচাগারই। যেটুকু রেশন পান আর কার্যত চেয়েচিন্তে একার পেটে কোনও রকমে চলে যায়। বাড়ি পেতে দুয়ারে সরকারে আবেদন করলেও লাভ হয়নি। বৃদ্ধার মেয়ে লক্ষ্মী মাহাতোর আক্ষেপ, চাইলেও মায়ের কাছে এসে থাকতে পারেন না। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের চাঁদমণি কড়া মুদির কথায়, “আবাসের তালিকায় ওই বৃদ্ধার নাম আছে কি না, পঞ্চায়েত বলতে পারবে না। কারণ, দুয়ারে সরকার শিবিরে জমা পড়া সমস্ত আবেদনপত্র ব্লক অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে চলতি মাস থেকে তাঁর বার্ধক্য ভাতা চালু হয়েছে।”
ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক তরজা থেমে নেই। বিজেপির বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর কটাক্ষ, “মাথার উপরে ছাদ নেই বলে ওই মা শৌচাগারে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। পুরুলিয়া লোকসভার তৃণমূলের যিনি প্রার্থী, তিনি ছ’বারের বিধায়ক ও ওই কেন্দ্র থেকে দু’বার জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতিও ওই আসন থেকে নির্বাচিত। এটাই কি তাঁদের উন্নয়নের রোল মডেল!” তাঁর আরও দাবি, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের উন্নয়ন করছেন। আর এখানে এসে তা থেমে যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করেও তিনি বলেন, “উনি পর্যটকের মতো পুরুলিয়ায় আসেন আর ভাষণ দিয়ে যান। মানুষের দুর্দশা জানেন না।” পাল্টা, ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারই তো আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না। তাই কাজ আটকে রয়েছে। বিদায়ী সাংসদ কেন দিল্লিতে গিয়ে বলছেন না, রাজ্যের পাওনা টাকা দেওয়া হোক!”