ভুল দেখেই সতর্ক করলেন বিডিও

একশো দিনের কাজের মজুরদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্তার এই কথোপকথন ভাল ভাবেই গড়াচ্ছিল। হঠাৎ-ই ছন্দপতন। বিডিও-র প্রশ্ন, ‘‘কে কে কাজ করছেন, সেই নামের তালিকা কি সুপারভাইজার প্রত্যেক দিন নেন?’’ মুখ চাওয়া চাওয়ি শুরু হল উপস্থিত মজুরদের মধ্যে।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৫
Share:

মজুরদের কাগজপত্র খতিয়ে দেখছেন বোলপুরের বিডিও। নিজস্ব চিত্র।

‘জবকার্ড আছে?

Advertisement

হ্যাঁ।

পাসবই আছে? ব্যাঙ্কের না পোস্ট অফিসের?

Advertisement

ব্যাঙ্কের পাসবই।

সেগুলো কার কাছে থাকে?

আমার কাছেই।’

একশো দিনের কাজের মজুরদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্তার এই কথোপকথন ভাল ভাবেই গড়াচ্ছিল। হঠাৎ-ই ছন্দপতন। বিডিও-র প্রশ্ন, ‘‘কে কে কাজ করছেন, সেই নামের তালিকা কি সুপারভাইজার প্রত্যেক দিন নেন?’’ মুখ চাওয়া চাওয়ি শুরু হল উপস্থিত মজুরদের মধ্যে। অবস্থা বুঝতে পেরে ভবিষ্যতে যেন এমন ক্রুটি না হয় জানিয়েও ওই মজুরদের সামনেই সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজারকে সতর্ক করলেন ওই কর্তা। সঙ্গে মজুরদের উদ্দেশে বিডিও-র পরামর্শ, ‘‘শুধু কাজে এলে হবে না। আপনাদের আরও কিছু কাজও করতে হবে। প্রত্যেক দিনের জন্য ১৭৬ টাকা যেমন গুনে নেবেন, তেমনই আপনারা কতটা কাজ করছেন আমরাও তা মেপে নেব। সুপারভাইজার যাতে কোনও রকমের বদমায়সি না করে, সে দিকেও আপনারা নজর রাখবেন। সমস্যা হলে সরাসরি আমাকে জানাবেন।’’

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল বোলপুরের কঙ্কালিতলা পঞ্চায়েতের পারুলডাঙা। প্রশ্নকর্তা তথা পরামর্শদাতা— বোলপুরের বিডিও শমীক পানিগ্রাহী। আর উত্তর দিচ্ছিলেন পারুলডাঙায় একশো দিন কাজের প্রকল্পের মজুরেরা। এ দিন দিনভর কঙ্কালিতলা পঞ্চায়েতের পারুলডাঙা, আদিত্যপুর, বগদৌড়া, রাওতারা, ফুলবনি, ধোলটিকুড়ির মতো এলাকায় এ ভাবেই ছুটে বেড়ালেন বিডিও। এমন অভিযানের খবর পেয়ে বিডিও-র কাছে হাঁপাতে হাঁপাতে হাজির ছিলেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহম্মদ অহিদউদ্দিন।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দুর্নীতি রুখতে এমনই অভিযানে নেমেছে ব্লক প্রশাসন। ব্লকের পঞ্চায়েত এলাকায় চলা একাধিক প্রকল্প এলাকায় হঠাৎ পরিদর্শন গিয়ে খোঁজখবর করলেন বিডিও। সেই অভিযানের শেষে কঙ্কালিতলা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহম্মদ অহিদউদ্দিন অবশ্য দাবি করলেন, “জবকার্ড, সঞ্চয়ের বই-সহ একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং কাজ ও পারিশ্রমিক নিয়ে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য পঞ্চায়েতও উদ্যোগী হয়েছে।”

ঘটনা হল, গত কয়েক মাস ধরেই প্রথমে ষাটপলশা ও পরে বোলপুরের পঞ্চায়েতে একশো দিন প্রকল্পে জবকার্ড ও পাসবই আটকে রেখে মজুরদের ঠকিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাস কয়েক আগেই ব্লকের রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, কাজ না করেও মাস্টাররোলের তালিকা তৈরি, শ্রমিকদের কার্ডে কাজের দিনের উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট পরিমাণের টাকাও পাসবইতে এসেছিল বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে ঘেরাও, অবস্থান ও বিক্ষোভ চলে। ষায়পলশার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হলেও রাইপুর-সুপরের ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ হয়নি। কিন্তু তদন্তে নেমে এমন ঘটনার কথা জানতে পেরেছিল ব্লক প্রশাসন। তাই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যাতে কোনও রকমের অন্যায় ও দুর্নীতি না হয়, তার জন্যই উদ্যোগী হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।

পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, দিন সাতেক ধরে পঞ্চায়েত এলাকার জবকার্ডধারীদের মধ্যে কার্ড ‘আপ টু ডেট’ করার কাজ শুরু হয়েছে। এ দিন একাধিক জায়গায় চলা মাটির রাস্তা, সেচ নালা, মাঠের নালা তৈরির কাজের প্রকল্পে প্রায় দেড় হাজারের কিছু বেশি শ্রমিকদের কাছে খোঁজ নেন বোলপুরের বিডিও। বোলপুরের পারুলডাঙার ভগবতী লোহার, আদিত্যপুরের বাসিন্দা অনিমা হাজরা, পূর্ণিমা দলুইদের মতো জবকার্ড ধারীরা এ দিন বলেন, ‘‘বিডিও নিজে এসে এ ভাবেই আমাদের খোঁজ নেওয়ায় ভাল লেগেছে। নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম। বিডিও-কে ধন্যবাদ।’’ নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করেই ভবিষ্যতে দুর্নীতি রোখার শপথ নিয়েছেন তাঁরা।

দিনের শেষে অভিযান নিয়ে খুশিই দেখাল বিডিও-কে। শমীকবাবু বলেন, “কেমন কাজ হচ্ছে ঘুরে দেখলাম। কাজ এবং পারিশ্রমিক নিয়ে যাতে কোনও পক্ষের মধ্যে কোনও সমস্যা না থাকে, তা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জবকার্ড, পাসবই, কাজে হাজিরার নথি নিয়ে মজুরদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement