অনুষ্ঠানে শুকদেব। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
রাস্তার ধারে খড়ের ছাউনি আর বাঁশের ছিটেবেড়ার একচালা ঘর। ভিতর থেকে ভেসে আসছে গানের কলি—“ওগো, ঘরছাড়া একতারার বাউল, থাকবে কেন গাছতলায়? এবার গৃহে ফিরে এসো।” মাড়গ্রামের খেদাপাড়ার শুকদেব দাস বাউল গেয়ে চলেছেন গান। আখড়ার মেঝেয় জনা পনেরো শিক্ষার্থী। তালিম নিচ্ছেন তাঁরা। এই আখড়া ঘিরেই শুকদেব দাস গড়ে তুলেছেন ‘মাড়গ্রাম শুকদেব বাউল সঙ্গীত অ্যাকাডেমি’। শনিবার শুরু হল পথচলা।
পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই শুকদেব বাবা পশুপতি দাসের কাছে বাউল গানের শিক্ষা নিয়েছেন। আট বছর বয়সেই মঞ্চে গেয়েছেন লালনের গান—“চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে।’’ বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন পথে পথে। তাতেই জগতের সঙ্গে চেনাজানা হয়েছে বিস্তর। নবম শ্রেণির পরে স্কুলে গিয়ে পুঁথিপড়া আর হয়নি। পুরোদস্তুর ডুব দিয়েছেন বাউলের আধ্যাত্মিক তত্ত্বে। ছুটে ছুটে গিয়েছেন নানা গুরু, গোঁসাইয়ের কাছে; কখনও মুর্শিদাবাদ জেলার হৈদরপুর, কখনও বীরভূমের বীরচন্দ্রপুর।
২৮ বছর বয়সে বাবাকে যখন হারালেন, তাঁর ঝুলিতে জমা হয়েছে কয়েকশো গান। এখনও পর্যন্ত তার সমস্তটা খাতায় লিপিবদ্ধ করতে পারেননি শুকদেব দাস বাউল। লালনের গানের জন্য শিক্ষা নিয়েছেন গোপাল শা-র কাছে। পরে শশাঙ্ক গোঁসাই, পূর্ণচন্দ্র গোস্বামীর সাহচর্য পয়েছেন। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে গোঁসাই হাউরের গান, কুবীর চাঁদের গান, শরতের গান। ২০০৬ সালে শুকদেব দাস রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি পুরস্কার পান।
এই শুকদেব দাসে বাউলের একটা সময়ে মনে হতে শুরু করে বাঙলার বাউল পরম্পরা আরও মজবুত করে বেঁধে বেঁধে রাখা দরকার। নিজেই লিখতে শুরু করলেন গান। ঠিক করলেন, আখড়াতেই তৈরি করবেন বাউল অ্যাকাডেমি।
শুকদেব বলেন, ‘‘কেবল বাউল গানের গায়কি শিক্ষা নয়, গানের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব, তাল শিক্ষাও দরকার। শিক্ষার্থীদের গানের প্রতি শ্রম, দম, জপ আর তপ বাড়ানোর চেষ্টা করি। ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা। তার পরে অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি অনুমোদন মিলল। ঘরটাকে একটু সাজিয়েগুছিয়ে শুরু করে দিলাম।’’
শনিবার আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া বাউল কার্তিক দাস ও অন্য অনেক গুণীজন এসেছিলেন তাঁর অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে। শুকদেব জানিয়েছেন, বাউল গান ছাড়াও বাঁশি, আনন্দলহরি, করতাল, তবলা, দোতারা, একতারার মতো বাউল পরম্পরার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালিমও মিলবে সেখানে।