কাজ: রানিবাঁধের অম্বিকানগরের হুচুকমোড়ে ‘কর্মদিশা’ প্রকল্পে সেচনালা সংস্কার। নিজস্ব চিত্র
একশো দিনের প্রকল্পে জেলা জুড়ে মজে যাওয়া সেচখাল সংস্কারে নামল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। শুক্রবার ওই কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন দাবি করল, এতে লক্ষাধিক মানুষ এক দিনে একশো দিনের কাজ পেয়েছেন। ঘটনাচক্রে, কাজ চেয়ে পঞ্চায়েতে আবেদন করার ঘটনাও দেখা গেল একই দিনে।
এক লপ্তে বহু মানুষকে কাজ দিতে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন একশো দিনের প্রকল্পে ‘কর্মদিশা’ প্রকল্প চালু করেছে। ১৯ মে ‘কর্মদিশা’র প্রথম দফায় এক দিনে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ কাজ পেয়েছিলেন বলে প্রশাসনের তথ্যে উঠে এসেছিল। সে বার বৃক্ষরোপণের জন্য গর্ত খোঁড়া, ‘হাপা’ (ছোট জলাশয়) কাটা, নালা সংস্কারের মতো কয়েকশো প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এ দিন ‘কর্মদিশা’-র দ্বিতীয় দফায় এক দিনে প্রায় ১ লক্ষ ৯২ হাজার মানুষ কাজ পেয়েছেন বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। কাজ পাওয়া মানুষজনের মধ্যে ১২,৩৪১ জন পরিযায়ী শ্রমিকও রয়েছেন বলে প্রশাসনের দাবি।
বাঁকুড়া জেলার একশো দিনের কাজের প্রকল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে বাঁকুড়া জেলায় ১ কোটি ১৩ লক্ষ শ্রম দিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরি হয়ে গিয়েছে। জেলার একশো দিনের কাজ প্রকল্পের আধিকারিক জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “কর্মদিশা প্রকল্পের জন্য জেলায় একশো দিনের কাজের গতি বাড়ছে।”
জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত পার করব। আমরা লক্ষমাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কর্মদিবস সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।”
এ দিন জেলার ১৩৯টি পঞ্চায়েতে মোট ৩৭৮টি মজে যাওয়া সেচ খাল সংস্কার শুরু হয়েছে। হিড়বাঁধ ব্লকে প্রকল্পের সূচনায় ছিলেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, রাইপুরে ছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু ও জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ, ইঁদপুর ব্লকে ছিলেন জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি শুভাশিস বটব্যাল, সিমলাপাল ব্লকে ছিলেন জেলা পরিষদের ‘মেন্টর’ অরূপ চক্রবর্তী। জেলাশাসক বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে কর্মদিশার তৃতীয়, চতূর্থ ও পঞ্চম দফার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই সারা হয়েছে। কর্মদিশার তৃতীয় দফার কাজ দ্রুত সেরে ফেলার লক্ষ্য রয়েছে।’’
তবে বিভিন্ন মহল থেকে লকডাউনে ভিন্ রাজ্যে কাজ হারিয়ে জেলায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার দাবি তোলা হচ্ছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মজুরি যাতে প্রকৃত শ্রমিকদের হাতে যায় সে দাবিও উঠছে।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়া পঞ্চায়েতে একশো দিনের প্রকল্পে কাজের দাবিতে স্মারকলিপি দেয় ‘সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন’। তাদের দাবি, স্থানীয় প্রায় চল্লিশজন মানুষ এ দিন পঞ্চায়েতে কাজ চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনকারীদের মধ্যে হিরা বাউরি, আরতি লোহারেরা বলেন, “আমরা খেতমজুরি করতাম। ‘লকডাউন’-এ কাজ হারিয়ে ঘরে বসে আছি। এখন একশো দিনের কাজ পেলে হাতে টাকা আসে। তাই কাজ চেয়েছি।” ঘুটগোড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের অরুণ শীটের অবশ্য দাবি, “এ দিনই প্রায় ৫৭৬ জন শ্রমিক স্থানীয় জোড় খাল সংস্কারের কাজ করেছেন। যাঁরা কাজের জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদেরও কাজ দেব।”
সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুজয় চৌধুরীর অভিযোগ, “একশো দিনের কাজ হচ্ছে না এমন নয়। তবে বহু প্রকৃত মানুষই কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শ্রমিকদের মধ্যে মজুরি বণ্টনেও বেনিয়ম আমাদের নজরে আসছে।” বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, “একশো দিনের কাজের লক্ষ্যই হল প্রত্যন্ত এলাকার গরিব মানুষকে কাজ দেওয়া। প্রকৃত শ্রমিকদের হাতে যেন কাজের টাকা পৌঁছয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে।’’ পক্ষান্তরে, রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, “একশো দিনের কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রশাসন সক্রিয়। এই জেলায় দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়নি। রাজনৈতিক কারণে বিরোধীরা অনেক কিছুই বলতে পারেন। মানুষ তাঁদের কথায় কান দেবেন না।”