ফি বাড়িয়ে আয় বৃদ্ধির পথে পুরসভা

‘খয়রাতি’ ও ‘ভর্তুকি’— রাজ্য রাজনীতিতে ভোট ব্যাঙ্ক দখলে রাখতে এই দু’টি বিষয়কেই শাসকদল হাতিয়ার করছে বলে প্রায়ই অভিযোগ তোলে বিরোধীরা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:২৩
Share:

ফি বাড়লেও পরিষেবা বাড়বে তো? না কি বাঁকুড়া স্টেশন রোডের মতোই খন্দপথ থাকবে। প্রশ্ন বাসিন্দাদের। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

‘খয়রাতি’ ও ‘ভর্তুকি’— রাজ্য রাজনীতিতে ভোট ব্যাঙ্ক দখলে রাখতে এই দু’টি বিষয়কেই শাসকদল হাতিয়ার করছে বলে প্রায়ই অভিযোগ তোলে বিরোধীরা।

Advertisement

তবে বাঁকুড়া পুরসভার নতুন পুরবোর্ডকে সেই চেনা ছকের বাইরে হেঁটে সংস্কারমুখী হতে সাহসী পদক্ষেপ করতে চলেছে। পুরসভার প্রথম বোর্ড মিটিংয়েই আয় বাড়াতে বেশ কিছু পরিষেবার দর বাড়িয়েছে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। যার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সব মিলিয়ে নতুন বোর্ড গোড়াতেই জমজমাট বিতর্ক দানা বাঁধিয়েছে।

ভোটের রাজনীতির রাস্তায় সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে সংস্কার। তাই শাসক দল সাধারণত এই ঝুঁকি না নিয়ে কল্পতরু হওয়ার সস্তার রাজনীতির পথেই চলে। তা সে কেন্দ্র থেকে রাজ্য সরকার— সর্বত্রই এই ছবি দেখা যায়। তাতে সরকার যতই দেউলিয়া হোক, ভোটের স্বার্থে নতুন নতুন বিষয়ে ভর্তুকি ঘোষণা করাই রাজনীতির ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঁকুড়া পুরসভাও যে দেউলিয়া হওয়ার কিনারায় দাঁড়িয়ে, চেয়ারে বসেই তা টের পেয়ে গিয়েছেন নতুন পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। তাই প্রথম বোর্ড মিটিংয়ে বাড়িতে জলসংযোগ নেওয়ার ফি, জলের গাড়ির ভাড়া, সেফটি ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার ফি বাড়িয়ে সাহসী পদক্ষেপ করছেন তিনি। মহাপ্রসাদবাবুর সাফ স্বীকারোক্তি, “পুরসভার আর্থিক পরিকাঠামোর যা অবস্থা তাতে সংস্কার না করলে চালানো যাবে না!’’

Advertisement

পুরসভা সূত্রে খবর, এতদিন বাড়িতে জলের সংযোগ নেওয়ার জন্য লাগত ৩ হাজার ১০০ টাকা। এক্ষেত্রে আরও এক হাজার টাকা ফি বাড়ানো হয়েছে। জলের গাড়ির ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। ৫০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সেফটি ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার জন্য পুরসভা গ্রাহকের কাছ থেকে এতদিন ২৫০ টাকা নিত। এখানে আরও ২০০ টাকা ফি বাড়ানো হয়েছে। পুরসভার বিভিন্ন আবেদনপত্রের দামেরও কিছু টাকা বাড়ানো হয়েছে। বোর্ড মিটিংয়ে ফি বৃদ্ধির কথা ঘোষণার পরেই প্রতিবাদে সরব হন বিরোধীরা। বোর্ড মিটিং থেকে ওয়াক আউট করেন বিরোধী কাউন্সিলাররা।

বাঁকুড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা স্বরূপ সেনের ক্ষোভ, “প্রথম বোর্ড মিটিংয়ে জনগনকে কী পরিষেবা দেওয়া হবে তা নিয়ে কোনও আলোচনাই হল না। উল্টে জলের সংযোগের ফি, জলট্যাঙ্কির ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হল? তিন বছর আগেই প্রাক্তন পুরপ্রধান শম্পা দরিপা এ সবের ভাড়া বাড়িয়ে ছিলেন।’’

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আয় বাড়ানোর জন্য সামান্য সংস্কারের রাস্তায় গিয়ে বিশেষ একটা কিছু সুবিধা করতে পারবে না বাঁকুড়া পুরসভা। কারণ পড়শি জেলার পুরুলিয়া পুরসভাতেও এই সব পরিষেবা পেতে বাঁকুড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা গুনতে হয় পুরুলিয়ার পুরবাসিন্দাদের। এ কথা মেনেও নিচ্ছেন পুরপ্রধান মহাপ্রসাদবাবু। তাঁর অভিমত, যে হারে ফি’ বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে পুরসভার আয় বছরে প্রায় ২ লক্ষ টাকা বাড়বে। তাঁর বক্তব্য, “এক একটি ওয়ার্ডে শুধুমাত্র জলের পরিষেবা ঠিকঠাক রাখতে পাইপ লাইনেরই কাজ হয় প্রায় ১ লক্ষ টাকার। সব কিছুই ভর্তুকি দিয়ে টানতে হচ্ছে। যা পরিস্থিতি তাতে বছরে দু’লক্ষ টাকা আয় বাড়িয়ে আমরা কিছুই সুরাহা করতে পারব না।’’

পুরসভার আয় আর কী কী ভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়েও বিশেষ চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন মহাপ্রসাদবাবু। এ ক্ষেত্রে বাঁকুড়ার গোবন্দনগর বাসস্ট্যান্ডের দিকে নজর দিয়েছে বাঁকুড়া পুরসভা। মহাপ্রসাদবাবু জানান, গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে এই মুহুর্তে কোনও আয় হচ্ছে না বাঁকুড়া পুরসভার। বাসস্ট্যান্ড উন্নয়নে এ জন্য আর্থিক বরাদ্দও মিলছে না এই কারণে। তিনি বলেন, “বাসস্ট্যান্ড থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে আমাদের। কিন্তু তা করতে পারছি না বলে বাসস্ট্যান্ড উন্নয়নের জন্য বড় কোনও প্রকল্প পাচ্ছি না আমরা। বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরসভা কী ভাবে আয় করতে পারে তা নিয়ে বাসমালিক সমিতি, বাসকর্মী সংগঠন ও হকারদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছি।’’

শাসক পক্ষ যাই বলুক, পরিষেবার দর বাড়ানোর প্রতিবাদ থেকে বিরোধীরা এক চুলও সরবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্বরূপবাবু। তাঁর ক্ষোভ, শহরের ময়রাবাঁধ মণ্ডলপাড়া, মিলনপল্লি, প্রণবানন্দপল্লি, রাজগ্রাম, কেঠারডাঙার একাংশের মানুষ পুরসভার জলই পান না। এই সব এলাকায় কী ভাবে জল সংযোগ দেওয়া যায় সে বিষয়ে না ভেবেই নতুন পুরবোর্ড শুধু আয়ের চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, “যে সব ওয়ার্ডে এখনও জলের ব্যবস্থা করতে পারেনি অবিলম্বে সেখানে জল পৌছনোর ব্যবস্থা করতে হবে।”

পুরপরিষেবার মানোন্নয়নের প্রশ্নে সওয়াল করেছেন শহরের মানুষও। গোবিন্দনগর এলাকার বাসিন্দা সৌমেন পালের কথায়, “শহরে পুরসভার গড়ে দেওয়া শৌচালয়গুলি নোংরা আবর্জনায় ভরে থাকে। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। সাধারণ মানুষ শৌচালয়ে না ঢুকে খোলা জায়গাতেই তাই প্রাকৃতিক কাজ সারছেন।”

তাঁর মতো অনেকেরই দাবি, শহরে আরও শৌচালয় গড়া দরকার। পাশাপাশি নিয়মিত সেগুলি পরিষ্কার করতে হবে। পুরসভা যদি আয় বাড়ায় তাহলে পরিষেবাও ভাল দিতে হবে। শহরের রাস্তাঘাট নিয়মিত মেরামতি, অন্ধকারময় এলাকাগুলিতে পথবাতি দেওয়ারও দাবি তুলেছেন অনেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement