অধীর: তখনও ব্যাঙ্ক খোলেনি। বিষ্ণুপুরে সোমবার। ছবি: শুভ্র মিত্র
টানা চার দিন ব্যাঙ্কের ঝাঁপ বন্ধ ছিল। মাস পয়লাতেও পকেট কার্যত গড়ের মাঠ। সোমবার ব্যাঙ্কের দরজা খুলতেই হামলে পড়েছিলেন গ্রাহকেরা। কেউ টাকা তুলতে পেরেছেন। আবার অনেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কনুইয়ের গুঁতো খেয়েও ফিরে গিয়েছেন খালি হাতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ধর্মঘট মিটলেও ছেদ পড়েনি গ্রাহকদের ভোগান্তিতে। বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় এটাই ছিল এ দিনের চিত্র।
গত বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজো উপলক্ষে বন্ধ ছিল ব্যাঙ্ক পরিষেবা। তার পরে ব্যাঙ্ক কর্মচারী সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কার্যালয়গুলি বন্ধ ছিল দু’দিন। ররিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ফলে, টানা চার দিন ব্যাঙ্ক খোলা না থাকায় গ্রাহকদের বড় অংশের পকেটে নগদের সঙ্কট তীব্র হয়েছিল। ধর্মঘটের আওতায় বাইরে ছিল এটিএম। কিন্তু টাকার সরবরাহে টান পড়ায় গত দু’-তিন দিন দুই জেলায় বহু এটিএম কাউন্টার বন্ধ ছিল।
মাস পয়লায় বেতন কিংবা পেনশনের টাকা তুলতে না পারা ব্যাঙ্ক গ্রাহকেরা এ দিন সকাল থেকেই লাইন দিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক এবং এটিএম কাউন্টারের সামনে। সময় যত গড়িয়েছে, ততই দীর্ঘ হয়েছে লাইন। পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, আদ্রা, ঝালদা শহরের মতো জেলার অনেক জায়গাতেই চিত্রটা ছিল এমন। পুরুলিয়া শহরে জেলাশাসকের কার্যালয়ের পাশে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা। সকাল ১০টা নাগাদ সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অন্তত দেড়শো গ্রাহককে। পাশেই রয়েছে একটি এটিএম কাউন্টার। সেখানকার ছবিটাও ভিন্ন ছিল না।
ব্যাঙ্ক খোলার আগেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী ঝলকবাহাদুর ছেত্রী। ঘণ্টা দেড়েক গুঁতোগুঁতি সহ্য করেও কাউন্টারের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেননি। শেষে অধৈর্য হয়ে বললেন, ‘‘নেপালে দেশের বাড়ি যাব। দুপুরে আসানসোল থেকে ট্রেনে রিজার্ভেশন করা আছে। এখনও ব্যাঙ্কের ভিতরেই ঢুকতে পারলাম না।’’ আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে লাইনে দাঁড়ানো পরিচিত এক জনের থেকে টাকা ধার করে স্টেশনের দিকে হাঁটা দেন তিনি। ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ঝালদার প্রাক্তন কংগ্রেস উপপুরপ্রধান বঙ্কিম লাহিড়ী। অনেক ঠেলাঠেলির পরেও লাইন এগোয়নি। অগত্যা ফাঁকা পকেটেই ফিরতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ধাক্কাধাক্কি আর সহ্য করতে পারলাম না।” একই অভিজ্ঞতা রঘুনাথপুর শহরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরুণ মুখোপাধ্যায়েরও।
পুরুলিয়া শহরের রাঁচি রোড এলাকার পাঁচটি এবং জেলাস্কুলের মোড়ের দু’টি এটিএম থেকে এ দিন টাকা পাওয়া যায়নি। রঘুনাথপুরের ব্লকডাঙায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে টাকা মিলেছে। অন্যগুলি হয় বন্ধ ছিল, না হয় কাউন্টারে টাকা ছিল না। ঝালদা বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া দু’টি এটিএম-এর একটি থেকে টাকা মেলেনি। অপরটিতে ছিল শুধু দু’হাজার টাকার নোট। শহরের বাকি দু’টি এটিএমের একটির ঝাঁপ বন্ধ ছিল। অন্যটিতে বেলা গড়াতেই টাকা ফুরিয়েছে। এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এটিএম থেকে টাকা তুলতে পেরেছিলেন রঘুনাথপুর শহরের বাসিন্দা মনোজ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘নোট বাতিলের সময়েও একই অবস্থা হয়েছিল।”
বাঁকুড়ার মাচানতলা পেট্রোলপাম্প মোড় লাগোয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সামনে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। লাইনে দাঁড়িয়ে কাটজুড়িডাঙার পিনাকী দাস বলেন, ‘‘বাবার পেনশনের টাকা তুলতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। হাতে থাকা নেই। এটিএম-এ টাকা ছিল না।’’
বিষ্ণুপুরের বৈলাপাড়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে অবসরপ্রাপ্ত বনকর্মী অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’’ তালড্যাংরার ডুমুরডিহা থেকে পেনশনের টাকা তুলতে বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন ভুজঙ্গ মণ্ডল। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভোরে এসেছি। কখন টাকা পাব জানি না!’’