হাত ফাঁকা, দোকানে পড়ে সারানো ঢাক
Dhaki

ডাক আসেনি ঢাকির, থমথম করছে তল্লাট 

পুজোর মরসুমের উপরেই নির্ভরশীল বছরের আয়ের বড় অংশ। এ বার করোনার আবহে কেমন বরাত পাচ্ছেন নানা শিল্পের সঙ্গে জড়িতেরা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।রোজ সকালে নাতি-নাতনিদের রাশি রাশি প্রশ্নের মুখে পড়ছেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের গুড়ুর গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ কালিন্দী। কী উত্তর দেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০১
Share:

অপেক্ষা: পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের গুড়ুর গ্রামে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

ওরা জানে, পুজোর সময়ে দাদু অনেক দূরে যান। সেখানে মস্ত মণ্ডপ, অনেক আলো, প্রচুর লোক ভোগ খায়। আর ফেরার সময়ে ওদের জন্য নিয়ে আসেন পুজোর জমা, মিষ্টি, চকলেট, পুতুল। রোজ সকালে নাতি-নাতনিদের রাশি রাশি প্রশ্নের মুখে পড়ছেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের গুড়ুর গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ কালিন্দী। কী উত্তর দেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এ বছর ঢাক বাজানোর কোনও বায়না পাননি। জানান, গ্রামের অনেকেরই এমন অবস্থা।

Advertisement

পুরুলিয়ার বান্দোয়ান আর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে বেশ কয়েক ঘর ঢাকি থাকেন। কারও অতি সামান্য জমি রয়েছে। মূলত ভাগচাষ করেই টেনেটুনে চলে সংসার। পুজোয় দূর-দূরান্তে ঢাক বাজিয়ে যে টাকা ঘরে আনেন, তা দিয়ে কেউ বাড়ি মেরামত করান। কেউ মেয়ের বিয়ের জন্য জমিয়ে রাখেন।

কলকাতা তো বটেই, পুজোর সময়ে পটনা, ভুবনেশ্বর, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে যাচ্ছিলেন বিষ্ণুপুরের কাঁকিল্যা, রাধানগর, রাউতোড়ার ঢাকিরা। এ বছর অনেকেই বরাত পাননি। রাউতোড়ার প্রবীণ মথুর বাগদির সাত জনের সংসার শিল্পী ভাতার মাসিক হাজার টাকায় চলে। ৪০ বছর ধরে পাটনার গরদানিবাগ কলোনির পুজোয় ঢাক বাজিয়েছেন তিনি। এ বছর এখনও ডাক আসেনি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘শেষ মুহূর্তে ডাক যদি আসেও, যাওয়ার উপায় নেই। ট্রেন বন্ধ।’’

Advertisement

বান্দোয়ানের গুড়ুর গ্রামের ইন্দ্র কালিন্দী জানান, গ্রামের পাঁচ-ছ’জন ঝাড়খণ্ডের একটি পুজোয় ঢাক বাজান। এ বছর উদ্যোক্তাদের ফোন করেছিলেন। সেখান থেকে বলে দিয়েছে, এক জন এলেই চলবে। ওই গ্রামেরই ঢাকি মেথর কালিন্দী বলেন, ‘‘পুজোয় দিল্লিতেও ঢাক বাজাতে গিয়েছি। এ বার কোথাও ডাক না পেয়ে বান্দোয়ানেই বায়না নিলাম।’’

বিষণ্ণ কাঁকিল্যার আদিত্য রুইদাসও। বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তার ধারে তাঁর দোকান। গত বছর গোটা পাঁচেক নতুন ঢাক বিক্রি হয়েছিল পুজোর আগে। আর বাইরে যাওয়ার আগে ঢাক সারাই করানোর জন্য লাইন দিয়েছিলেন ঢাকিরা। এ বার শুধু একটি মেরামতির বরাত পেয়েছেন। তা-ও মজুরি অর্ধেক করার পরে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক আগে সারাতে দিয়ে যাওয়া ঢাক এখনও দোকানে পড়ে রয়েছে। হাতে টাকা নেই। কেউ নিতে আসছে না।’’

প্রতিবেদন: প্রশান্ত পাল, অভিজিৎ অধিকারী ও শুভ্র মিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement