ফের চড় পুলিশকে, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অধরাই

থানায় ঢুকে পুলিশকর্মীদের মারধরে বার বার জড়াচ্ছে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের নাম। বীরভূমের বোলপুর, কলকাতার আলিপুর, উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়ার পরে এ বার বাঁকুড়ার পাত্রসায়র। পাত্রসায়রে থানায় শুক্রবার রাতে সদলবলে ঢুকে ডিউটি অফিসারকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত ওরফে গোপের বিরুদ্ধে। এমনকী, থামাতে গেলে থানার ওসি-কেও হেনস্থা করা এবং প্রাণে মারার হুমকি দেওয়াতেও অভিযুক্ত ওই নেতা। কিন্তু গোলমালের পরে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য-সহ ২৪ জনকে ধরলেও মূল অভিযুক্ত গোপের সন্ধান শনিবারেও পায়নি পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

থানায় হামলার অভিযোগে ধৃত অন্যরা। শনিবার পাত্রসায়রে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

থানায় ঢুকে পুলিশকর্মীদের মারধরে বার বার জড়াচ্ছে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের নাম। বীরভূমের বোলপুর, কলকাতার আলিপুর, উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়ার পরে এ বার বাঁকুড়ার পাত্রসায়র।

Advertisement

পাত্রসায়রে থানায় শুক্রবার রাতে সদলবলে ঢুকে ডিউটি অফিসারকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত ওরফে গোপের বিরুদ্ধে। এমনকী, থামাতে গেলে থানার ওসি-কেও হেনস্থা করা এবং প্রাণে মারার হুমকি দেওয়াতেও অভিযুক্ত ওই নেতা। কিন্তু গোলমালের পরে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য-সহ ২৪ জনকে ধরলেও মূল অভিযুক্ত গোপের সন্ধান শনিবারেও পায়নি পুলিশ। তার উপরে এ দিনই দু’টি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা থাকলেও ধৃতেরা আদালতে শর্তাধীনে জামিন পাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ আরও উচ্চগ্রামে উঠেছে কারণ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার এ দিন সকালে তিনি বলেন, “এ রকম কিছু ঘটেনি।” দুপুরে তাঁর বক্তব্য, “থানায় ঢুকে হামলার ঘটনায় বাকি যারা জড়িত, থানার সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।” বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি তথা জেলার নেতা সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “থানায় ঢুকে পুলিশের উপরে বারবার হামলা করছে শাসক দলের লোকজন। পাত্রসায়রে তেমন কাণ্ড করে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে টিএমসিপি-র এই নেতা চলে গেলেন, পুলিশ তাঁকে ধরতে পারল না। শাসক দল পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে বলেই, আজ পুলিশের এই হাল।” টেলিফোনে গোপে অবশ্য আনন্দবাজারের কাছে দাবি করেছেন, “আমার বিরুদ্ধে পুলিশ মিথ্যা অভিযোগ করেছে।”

Advertisement

পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন নয়। দলেরই একাংশের অভিযোগ, এলাকার ক্ষমতা ধরে রাখা থেকে ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে কমিশন আদায় করার মতো বিষয় ঘিরে প্রায়শই দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট বাধছে। শুক্রবার পাত্রসায়র পঞ্চায়েতে একটি টেন্ডার ডাকা নিয়ে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। অভিযোগ, বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা এক ঠিকাদারকে গোপের লোকেরা হুমকি দেয়। পাল্টা গোপের কাছেও হুমকি-ফোন আসে।

পুলিশ সূত্রের দাবি, রাত ১০টা নাগাদ গোপে থানায় হুমকি-ফোন নিয়ে অভিযোগ জানান। এর পরে থানা লাগোয়া তৃণমূলের পার্টি অফিসে গোপের অনুগামীদের ভিড় করতে দেখা যায়। বেগতিক বুঝে পাত্রসায়র থানা আশপাশের থানায় খবর দেয়। রাত ১টা নাগাদ গোপে প্রায় ১০০ জন কর্মীকে নিয়ে থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর সুকান্ত দাস দের কাছে অভিযুক্তকে কেন ধরা হয়নি, তা নিয়ে বচসা জোড়েন। এরপরে ওই এএসআইকে চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং চেয়ার-টেবিল উল্টে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওসি থামাতে গেলে তাঁর সঙ্গেও গোপে-ঘনিষ্ঠদের ধস্তাধস্তি বাধে। থানায় গোলমাল পাকিয়ে গোপে ও তাঁর সঙ্গীরা যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখনই পুলিশ বাহিনী সেখানে পৌঁছয়। ২৪ জন ধরা পড়েন। কিন্তু গোপে পালান।

পাত্রসায়র থানার ওসি রামনারায়ণ পাল গোপে-সহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে কর্তব্যে বাধা দেওয়া ও মারধরের মতো দু’টি জামিন-অযোগ্য ধারা-সহ মোট ন’টি ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও শনিবার বিষ্ণুপুর আদালত ধৃতদের জামিন দেয়। ঘটনাচক্রে বিষ্ণুপুর আদালতের দু’জন সরকারি আইনজীবীদের এক জনও এ দিন আদালতে ছিলেন না। পুলিশ জানিয়েছে, জামিনের আবেদনের কেউ বিরোধিতা করেননি। তবে আইনজীবী মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, ওই ধারাগুলির ক্ষেত্রে অভিযোগ কী ভাবে লেখা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে ইনজুরি-রিপোর্ট ও পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনা করে তেমন হলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করতেই পারেন। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলেরই একাংশের দাবি, গোপের বিরুদ্ধে আগে সালিশি সভা ডেকে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং নির্যাতিতাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মতো অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু দলেরই কিছু নেতার চাপে পুলিশ তাঁকে ছাড় দিয়ে এসেছে। এ বারেও তেমন কিছু হলে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

শাসক দলের নেতা তথা বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য এ অভিযোগ মানেননি। তাঁর বক্তব্য, “অত রাতে থানায় যারা হামলা চালিয়েছে, তারা আর যা-ই হোক, আমাদের দলের কেউ নয়। সব দুষ্কৃতী।” তা হলে গোপে কি দল থেকে বহিষ্কৃত? এ বার অরূপবাবু বলেন, “দল সব দেখছে। সময়মতো ওর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement