জখম আইসি অর্ঘ্য মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
নির্মীয়মাণ ইস্পাত কারখানায় স্থানীয় ও জমিদাতাদের কাজের দাবিতে বিক্ষোভ-অবস্থান চলছিল। তা তুলতে গেলে বিক্ষোভকারী ও স্থানীয়দের একাংশের পুলিশের উপরে চড়াও হয়ে লাঠি, বাঁশ নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার সকালে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের লছমনপুর গ্রাম লাগোয়া শ্যাম স্টিলের ইস্পাত কারখানার গেটে ওই ঘটনায় গুরুতর জখম হন রঘুনাথপুর থানার আইসি অর্ঘ্য মণ্ডল। অল্পবিস্তর জখম হন কয়েক জন পুলিশকর্মী। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আটক করে বিক্ষোভকারী ‘লোকাল অ্যান্ড ল্যান্ড লুজার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর অন্যতম নেতা মুস্তাফা আনসারি-সহ তেরো জনকে। সকলে লছমনপুরেরই বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে ছ’জন মহিলা রয়েছেন।
ঘটনার পরে রঘুনাথপুর থানায় যান জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কারখানার মূল গেট আটকে কিছু লোকজন শ্রমিকদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলেন। পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে যায়। সরে যেতে বলা হলে উল্টে পুলিশের উপরে চড়াও হয় তারা। ঘটনায় রঘুনাথপুর থানার আইসি জখম হয়েছেন। ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সকলকে গ্রেফতার করা হবে।”
লছমনপুর গ্রামের অদূরে বড় মাপের ওই সুসংহত ইস্পাত প্রকল্প গড়ছে শ্যাম স্টিল কর্তৃপক্ষ। গত বছরের এপ্রিলে নির্মাণকাজ শুরু হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সোমবার সকাল থেকে জনা পঞ্চাশ-ষাট জন ওই কমিটির নেতৃত্বে কারখানার গেটে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করেন। শ্রমিকদের কারখানায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। সে দিন বিকেল পর্যন্ত অবস্থান চলে। সন্ধ্যা নাগাদ সংস্থার সিনিয়র ডিজিএম (মানবসম্পদ) রাজেশচন্দ্র শুক্লা রঘুনাথপুর থানায় আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, লাঠি, লোহার রড, ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীরা এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছে। কারখানার শ্রমিক থেকে ঠিকাদার, সকলেই আতঙ্কে রয়েছেন।
এ দিন ভোর থেকে ফের কমিটির লোকজন কারখানার মূল গেটে জড়ো হন। স্থানীয় সূত্রে খবর, সকাল ৭টা নাগাদ কিছু পুলিশকর্মীকে নিয়ে কারখানায় পৌঁছন আইসি। কিছুটা ‘জোর’ করে কারখানার সামনে জড়ো হওয়া লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেই পুলিশকে তাক করে যথেচ্ছ ইট, পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। জখম হন কিছু পুলিশকর্মী। পরে লাঠি, বাঁশ নিয়ে পুলিশের উপরে চড়াও হন জনা ষাট-সত্তর জন। আইসিকে বেদম মারধর করা হয়। মাথা ফেটে যায় তাঁর। পুলিশকর্মীরাই পরে তাঁকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই পুলিশকর্তার মাথার তিন জায়গায় চোট লেগেছে। আপাতত দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
ঘটনার কিছু পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লানকুসুম ঘোষ ও রঘুনাথপুরের এসডিপিও অবিনাশ ভীমরাও যাধোয়ার। এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ১৩ জনকে। কারখানার জেনারেল ম্যানেজার বিপুল পাণিগ্রাহী বলেন, “সোমবার স্থানীয় কিছু লোকজনের বাধায় কারখানায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এ দিন পুলিশ অভিযান চালায়। ঘটনায় রঘুনাথপুরের আইসি আহত হন। আমরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।” এ দিন কারখানায় নির্মাণকাজে কোনও সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি।