ষাটপলশায় অভিযুক্ত তৃণমূল

এ বার মজুরদের বাড়িতেই হামলা

টাকা ফেরতের দাবিতে জবকার্ডধারীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবকার্ডধারীদেরই নিগ্রহের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাড়িতে তাণ্ডবও চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। সোমবার রাতে ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুরের ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৮:০১
Share:

টাকা ফেরতের দাবিতে জবকার্ডধারীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবকার্ডধারীদেরই নিগ্রহের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাড়িতে তাণ্ডবও চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। সোমবার রাতে ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুরের ঘটনা। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ মানেননি।

Advertisement

১০০ দিন কাজের প্রকল্পে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত কয়েক দিন ধরেই জবকার্ডধারীদের বিক্ষোভে ওই পঞ্চায়েতের প্রায় প্রতিটি গ্রাম তেতে উঠেছে। পরিস্থিতির সামাল দিতে সোমবারই ষাটপলশায় যান অনুব্রত। সেখানে প্রায় সকলেই দাবি করেন, যা করার সুরথ মণ্ডল ওরফে বাপ্পাই করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কোনও সরকারি কর্মী না হয়ে কীভাবে দিনের পর দিন ওই কারবার চালিয়েছে বাপ্পা। এ ক্ষেত্রেই উঠে এসেছে তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডলের ভূমিকার কথা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মজুরদের কাজ যন্ত্র করিয়ে লাভের পথ বাতলে জটিলের সুনজরে পড়েন বাপ্পা। যদিও জটিল এবং অনুব্রত— দু’জনেরই দাবি, দলের কেউ ওই ঘটনায় যুক্ত নন।

প্রশাসনেরই একটি সূত্রের যদিও দাবি, আত্মসাতের একটি নুতন উপায় উদ্ভাবন করেন বাপ্পা। ১০০ দিনের কাজে পঞ্চায়েতে মূলত গ্রামে ছোট রাস্তা নির্মাণ, পুকুর, সেচ নালা ও কাঁদর সংস্কারের মতো ছোটখাটো প্রকল্প নেওয়া হয়। পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে দুই গ্রামের সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণের মতো অপেক্ষাকৃত বড় ধরণের প্রকল্পও নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, ষাটপলশা পঞ্চায়েতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যন্ত্রের মাধ্যমে পুকুর, কাঁদর, সেচ নালার মাটি কেটে ফেলা হয় দুই গ্রামের বিভিন্ন সংযোগকারী রাস্তায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই সব পুকুর, কাঁদর কাটানোর মাটি দিয়েই রাস্তার কাজ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে রাস্তার কাজটি কার্যত বিনা খরচেই হয়ে যায়। সমান্তরালে দু’টি কাজ চলাকালীন যন্ত্র দিয়ে করিয়েও যাতে ধার না পড়ে, তার জন্য দু’টি ক্ষেত্রেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে ওই সব প্রকল্প সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করা হতো বলে অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে কোথাও প্রকল্পের ‘ডিসপ্লে বোর্ড’ পর্যন্ত লাগানো হয়নি। যাতে কাজ চলাকালীন ধরা পড়লে ১০০ দিন কাজের প্রকল্প নয় বলে অস্বীকারের সুযোগ থাকে। যন্ত্র দিয়ে করানো ওই সব কাজের টাকা তোলার জন্যই দিনের পর দিন মজুরদের ব্যাঙ্কের পাসবই এবং জবকার্ড আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা কী করছিলেন? নিয়মানুযায়ী, কাজ চলাকালীন নির্মাণ সহায়ক ও টেকনিকাল অ্যাসিস্টেন্টদের নিয়মিত পরিদর্শন করার কথা। কাজ শেষ হলে মাস্টাররোলে তাঁরা সই করেন। তার পরেই মজুরদের পাসবইয়ে টাকা ঢোকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ষাটপলশার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি— কোনও স্তরেই পরিদর্শন হয়নি বলে অভিযোগ। বাপ্পার গ্রাম মনোহরপুরের গ্রামের বাসিন্দাদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, সম্প্রতি গ্রামের বহু পুকুর, ডোবা, কাঁদরের যন্ত্র দিয়ে কেটে সেই মাটি ট্রাক্টরে করে গ্রাম লাগোয়া সন্ন্যাসীতলা থেকে মিত্রপলশা পর্যন্ত রাস্তায় ফেলা হয়েছে। কিন্তু, কোনও দিন কোনও সরকারি আধিকারিকে কাজের জায়গায় দেখা যায়নি।

এ দিকে, সোমবার রাতেই বাসুদেবপুরে সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া তিনটি পরিবারে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সন্ধ্যা বাগদি, বন্দনা বাগদি, নন্দ বাগদিরা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমাদের পাসবই থেকে হাজার হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের বৈদ্যনাথ পালের কাছে সেই টাকা ফেরত চেয়েছিলাম। তিনি সরাসরি না করে দেওয়ায় প্রাপ্য পাওয়ার লড়াইয়ে আমরা বিজেপিতে যোগ দিই। সেই আক্রোশে তৃণমূলের লোকেরা আমাদের মারধর করে বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে।’’ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বৈদ্যনাথবাবু পাল্টা দাবি করেছেন, বিজেপি-র লোকেরাই তাঁর বাড়িতে হামলা করেছে। তিনি ঘরছাড়া।

বিডিও মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘ষাটপলশার ঘটনায় জেলাস্তরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করার জন্য পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement