অনুব্রত মণ্ডল।
যে পাড়ায় ভোট মেলেনি, সেখানে উন্নয়ন স্তব্ধ করে দেওয়ার ‘ফরমান’ জারি করলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার দুবরাজপুরে আয়োজিত খয়রাশোলের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলেন অনুব্রতের এমন নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি-র বক্তব্য, সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ করার নির্দেশ কী ভাবে এক জন রাজনৈতিক দলের জেলা সভাপতি দিতে পারেন।
খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বুথগুলির সাংগঠনিক হাল হকিকত নিয়ে এ দিন খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন অনুব্রত। ওই পঞ্চায়েতের ৫৬ নম্বর বুথে কেন গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র কাছে হারতে হল, কারা ভোট দেননি— বুথ সভাপতি চন্দ্রশেখর বাগদির কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন অনুব্রত। উত্তরে বুথ সভাপতি জানান, একটি ‘বিশেষ পাড়ার’ মানুষ ভোট না দেওয়াতেই ওই বুথে তাঁদের হারতে হয়েছে। এ কথা শুনেই অনুব্রত মেজাজ হারান। সঙ্গে সঙ্গে সেই পাড়ায় কাজ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। অনুব্রত বলেন, ‘‘দেখি ওই বুথে বিজেপি কাজ করে দেয় কিনা! উন্নয়ন করে দেয় কিনা! দিল্লি থেকে কাজ হয় কিনা!”
বিতর্ক শুরু হয়েছে এই নির্দেশকে ঘিরেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত লোকসভা নির্বাচনে ৫৬ নম্বর বুথে বিজেপি পিয়েছিল ৪৫১টি ভোট। সেখানে তৃণমূল পেয়েছিল২১৬টি ভোট। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ওই বুথে নিকাশি নালা, কমিউনিটি হল, কংক্রিটের একাধিক রাস্তা, পথবাতি সবই হয়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষ ভোট না দেওয়ায় জেলা সভাপতির ক্ষোভ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
যা শুনে ওই এলাকারই বাসিন্দা, বিজেপির জেলা সম্পাদক অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘উন্নয়ন তেমন কিছুই হয়নি। তার তুলনায় অনেক বেশি ব্যক্তিগত উন্নয়ন হয়েছে শাসকদলের নেতাদের।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের পাশের বুথে প্রায় পাঁচশো বুথে হেরেছে তৃণমূল। তাই একটি পাড়াকে দোষারোপ করে কোনও লাভ নেই। এমন নির্দেশে মানুষ শাসকদল নয়, মানুষ আরও বেশি করে বিজেপির দিকেই ঝুঁকবেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, যে পাড়াকে এ ভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হল, সেখানকার মানুষজনের কিছু হলে তার দায় কে নেবে?
এ দিনই মঞ্চ থেকে হজরতপুর পঞ্চায়েতের রসা গ্রামের বুথ সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন অনুব্রত। লোকসভা ভোটের নিরিখে ওই বুথে প্রায় ৭০০ ভোটে পিছিয়ে ছিল শাসকদল। তার পরেও সাংগঠনিক কাজে দেখা যায়নি বুথ সভাপতিকে দেখা যায়নি, এমন রিপোর্ট পেয়ে তাঁকে পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দেন জেলা সভাপতি।