মল্লারপুরে হার কেন, কর্মিসভায় শুনলেন অনুব্রত

গত বছর পঞ্চয়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে বিরোধী প্রার্থী ছিল না বললেই চলে। জেলা পরিষদ ছিল সম্পূর্ণ বিরোধী-শূন্য। সব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূলের দখলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মল্লারপুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৫
Share:

অনুব্রত মণ্ডল।—ফাইল চিত্র।

কর্মিসভায় ফের অস্বস্তিতে পড়লেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। শনিবার তারাপীঠের সভায় রামপুরহাট-২ ব্লকের এক অঞ্চল সভাপতি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, নেতৃত্বের ব্যর্থতার জন্যই তাঁর অঞ্চলে গত বিধানসভা ভোটে হেরে যেতে হয়েছিল শাসকদলকে। এর চব্বিশ ঘণ্টা পরে মল্লারপুরের কর্মিসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে অনুব্রত শুনলেন, বিজেপি-র উত্থানে তাঁর দলের কিছু অঞ্চল সভাপতি শঙ্কিত। একাধিক অঞ্চল সভাপতি বলেই ফেললেন, ‘‘মল্লারপুর বিজেপির শক্ত ঘাঁটি।’’

Advertisement

গত বছর পঞ্চয়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে বিরোধী প্রার্থী ছিল না বললেই চলে। জেলা পরিষদ ছিল সম্পূর্ণ বিরোধী-শূন্য। সব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূলের দখলে। জেলার মোট জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে হাতছাড়া হয়েছে মাত্র দু’টি। সেই দু’টিরই একটি হল মল্লারপুর-১। অন্যটি হল মহম্মদবাজারের গণপুর। দু’টি পঞ্চায়েতেই ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। পঞ্চায়েতের এমন ফলেও অবশ্য সন্তুষ্ট নন অনুব্রত মণ্ডল। তাই লোকসভা নির্বাচন
আসার ঢের আগেই তিনি দলের বুথ ও অঞ্চল স্তরের নেতাদের ‘লিড’-এর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে
দিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মিসভায়।

কিন্তু, পঞ্চায়েত ভোটের এক বছর পরেও যে মল্লারপুরে সব ঠিকঠাক চলছে না, তা এ দিন শিববাড়ির মাঠের কর্মিসভাতেই বুঝে গেলেন শাসকদলের জেলা সভাপতি। মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতে কেন তাঁদের হার হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তরে সেই অঞ্চলের সভাপতি প্রিয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে বাহিনা গ্রামের একটি খুনের ঘটনার জেরে এবং আমাদের প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের অসন্তোষ থাকায় আমরা হেরেছি।’’ আবার তালুয়া অঞ্চলের সভাপতি বদরুদ্দোজা শেখ বলেন, ‘‘আমাদের সন্ধিগড়া বাজারের বুথে অতীতে কংগ্রেস, তার পরে তৃণমূল জিতে এসেছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে ওই বুথে প্রথম বার বিজেপি জিতল।’’ বাজিতপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি সূর্য মণ্ডল আবার অভিযোগ করেন, ‘‘কান্দিয়াড়া এলাকার এক তৃণমূল নেতা ৭ জন উপভোক্তার কাছে আবাসন যোজনার টাকার ভাগ নিয়েছিল। এ জন্য ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল।’’ পরে ময়ূরেশ্বরের বিধায়ক অভিজিৎ রায়ও বলেন, ‘‘ওই কর্মীর জন্য ওই বুথে আমরা হেরেছি। ওর মনমতো প্রার্থীকে টিকিট না দেওয়ায় নির্দলকে দাঁড় করিয়েছিল। ভোট কাটাকাটির সুবিধা বিজেপি পেয়েছে।’’

Advertisement

এ-সব কথা শুনে অনুব্রত বলেন, ‘‘কোনও পঞ্চায়েত সদস্য যদি ভেবে নেয় অঞ্চল সভাপতি বা বুথ সভাপতিকে মানব না, সে সদস্যের দরকার নেই। কোনও প্রধান যদি ভেবে নেয় দলকে বাদ দিয়ে কাজ করব তা হলে সেই প্রধানের কপালে অনেক দুঃখ আছে। দলই শেষ কথা বলবে।’’ তারাপীঠের মতোই এ দিন নেতৃত্বের একাংশের দিকে
আঙুল তুলেছেন বদরুদ্দোজা শেখ। অনুব্রতের সামনে তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার সময় যে উদ্যমে ভোট করেছিলাম, সেই উদ্যমে পঞ্চয়েতে ভোট করাতে পারিনি। এখন আমরা কিছুটা শঙ্কিত কিছু কিছু নেতার অবহেলা ও বঞ্চনার জন্য।’’ ওই নেতা-কর্মীরা দলে থেকে দলেরই ক্ষতি করছেন বলেও দাবি করেন বদরুদ্দোজা। অনুব্রত সেই কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এর ফল ভাল হবে না।’’ রাতে ফোন করা হলে বিধায়কও কার্যত স্বীকার করেন, একটা সময় ময়ূরেশ্বর বিজেপি-রই এলাকা ছিল। এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। তৃণমূল আবার সেখানে প্রভাব বিস্তার করছে।

এ দিন অনুব্রতের কাছে ডাবুক অঞ্চলের বীরচন্দ্রপুরকে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের আওতায় আনার অনুরোধ করেন এলাকার এক তৃণমূল কর্মী তিমির গোস্বামী। দাবি মেনে পর্ষদ সদস্য ত্রিদিব ভট্টাচার্যকে দ্রুত সভা ডাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement