স্বরাজ বক্সী। নিজস্ব চিত্র
রবিবার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হচ্ছে দেশ জুড়ে। বোলপুরের এক বাসিন্দার জীবনে এই দিনটা যেন অন্য সবার চেয়ে একটু বিশেষ অনুভূতির। কারণ দেশে ‘স্বরাজ’ আসার দিনেই তিনিও এসেছিলেন পৃথিবীতে। তাঁর নামও সেই সাক্ষ্য বহন করছে। বোলপুরের বাসিন্দা, সেই স্বরাজ বক্সীর একটা পরিচিতিই হয়ে গিয়েছে তাঁর জন্মদিন।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। দেশ স্বাধীন হওয়ার সেই শুভ দিনেই সকাল ৭টা ২০ মিনিটে বর্ধমানের গুসকরায় জন্ম স্বরাজবাবুর। নিজের জন্মের মুহূর্তের কথাও তিনি বড় হয়ে শুনেছিলেন। তা এখনও ছবির মত মনে আছে তাঁর। তিনি বললেন, ‘‘দরিদ্র কৃষক পরিবার ছিল আমাদের। ওই দিন সকালে আমাদের বাড়ি থেকে সদ্যোজাত আমার কান্নার আওয়াজ শুনেই গ্রামের বৃদ্ধ শিক্ষক বামাপদ মুখোপাধ্যায় চেঁচিয়ে উঠেছিলেন ‘গ্রামে স্বরাজ এসেছে’।’’ সেখান থেকেই তাঁর নাম হয়ে যায় স্বরাজ।
এমন জন্মদিন ঘিরে রয়েছে নানা মধুর স্মৃতিও। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের জন্মদিন আলাদা করে মনে রাখার ঝক্কি কোনও দিনই সামলাতে হয়নি। বয়স গোনার ঝামেলাও বিশেষ নেই।’’ স্বরাজবাবু জানান, বিদ্যালয়ে থাকাকালীন বেশ কয়েকবার ১৫ অগস্ট পতাকা উত্তোলনের জন্য ডাক পড়েছিল তাঁর। বহু শিক্ষক এবং উঁচু ক্লাসের দাদাদের সামনে পতাকা তোলা বেশ অস্বস্তিকরই ছিল। কলেজ স্তরেও স্বাধীনতা সংক্রান্ত কোনও অনুষ্ঠান বা আলোচনায় তাঁর উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক।
ব্যাঙ্কের দীর্ঘ কর্মজীবনেও ১৫ অগস্টের সময় যখন যে এলাকায় তিনি দায়িত্বে থেকেছেন, তখনই সেই এলাকায় নিজের অফিস ছাড়াও আশেপাশের অন্তত ৭-৮টি ক্লাব, বিদ্যালয় বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনের ডাক পড়ত তাঁর। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই জন্মতারিখই হয়ে উঠত তাঁর পরিচয়। তাঁর কথায়, ‘‘১৫ অগস্টের ছুটিটাও বরাবরই হাতছাড়া হয়েছে, কারণ কর্মক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন অনুষ্ঠানে আর কেউ উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক, আমাকে থাকতেই হত।’’
অবসরের পর বোলপুরের পশ্চিম গুরুপল্লিতে স্ত্রীর সঙ্গে আশ্রমের জীবন যাপন করছেন তিনি। প্রতি বছর নিয়ম করে এই দিনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন আশ্রমে আগত শিষ্যরা। তবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বণিক সভার আয়োজিত ‘সন অফ ইনডিপেন্ডেন্স’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও যেতে না পারার দুঃখটা রয়েই গেছে স্বরাজবাবুর। আজকাল বয়সের ভারে ও আশ্রমের বিভিন্ন কাজের চাপে আর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যেতে সময় দিতে পারেন না। তবে নিজের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতার এই স্মৃতিকে এ ভাবেই বয়ে নিয়ে যেতে চান স্বরাজবাবু।