আবর্জনা: রঘুনাথপুরের এ-টিম গ্রাউন্ডের কাছে। ছবি: সঙ্গীত নাগ
কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পে নিয়োগের পরেও ‘নির্মল সাথী’ ও ‘নির্মল বন্ধু’দের কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া নিয়ে তৈরি হওয়া বির্তকের মাঝে ফেরত গেল প্রকল্প তৈরির টাকা। সম্প্রতি রঘুনাথপুর পুরসভার কাছ থেকে ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ হওয়া ৫৫ লক্ষ টাকা ফেরত নিয়েছে ‘স্টেট আরবান ডেভলপমেন্ট এজেন্সি’ বা ‘সুডা’। পুরসভা সূত্রের খবর, জমি সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্প তৈরি করতে দেরি হচ্ছিল। তাই বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত নিয়েছে ‘সুডা’।
পুরপ্রধান তরণী বাউরি বলেন, “জমি সংক্রান্ত জটিলতায় কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প তৈরি করা যাচ্ছিল না। তাই ‘সুডা’ বরাদ্দ করা টাকা ফেরত চায়। তা ফেরত দেওয়া হয়েছে।” টাকা ফেরত যাওয়ার পরে প্রকল্পগুলি কার্যত বিশ বাঁও জলে চলে গিয়েছে, এমন নানা নজির রয়েছে। রঘুনাথপুরের কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পেরও একই পরিণতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ওয়াকিবহাল মহল।
পুরসভা সূত্রে খবর, বছর ছয়েক আগে রঘুনাথপুরে কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়। ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। পরিকাঠামো গড়তে প্রথম ধাপে সে সময়েই ৫৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল ‘সুডা’। রঘুনাথপুর শহরের মধ্যে প্রকল্প তৈরির পর্যাপ্ত জমি না থাকায় শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে শাঁকা পঞ্চায়েত এলাকায় প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা নেয় পুরসভা। সেই মতো পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা সরকারি জমি পুরসভাকে হস্তান্তরও করেছিল প্রশাসন। তবে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের বিরোধিতায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ‘শহরাঞ্চলের আর্বজনা’ গ্রামে ফেলা যাবে না, এই দাবি তুলেছিলেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন।
পুরসভার দাবি, এর পরে বিকল্প জমির ব্যবস্থা করতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়। তবে পুরসভার আশপাশে ফাঁকা বসতিহীন এলাকায় জমি পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষমেষ আদ্রা থানা এলাকায় আড়রা পঞ্চায়েতের বাঁকড়া মৌজায় এক একরের কিছু বেশি জমি পুরসভাকে দেয় প্রশাসন। তবে এখানেও শাঁকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। প্রকল্প হলে দূষণ ছড়ানোর দাবি তুলে প্রকল্পের বিরোধিতায় পথে নামে এলাকার বাসিন্দারা।
টাকা ফেরতের জন্য যদিও তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উদাসীনতাকে দায়ী করছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পে দূষণ ছড়ায় না। রাজ্যের বহু জায়গাতেই এই প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। জমি হাতে পেয়েও লোকজনদের বুঝিয়ে প্রকল্প গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। টাকা ফেরত যাওয়ায় হতাশ শহরবাসীর একাংশও। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজেশ কুম্ভকার ও পার্থ মাজি, ৪ নম্বরের গিরিধারী মণ্ডলেরা বলেন, “এমনিতেই সাফাই ঠিক ভাবে হয় না। রাস্তাঘাটে আর্বজনা জমে থাকে। প্রকল্প তৈরি হলে আর্বজনা-সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারত। টাকা ফেরত যাওয়ায় প্রকল্প তৈরি হওয়া নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল।”
বর্তমানে পুর-শহরের আর্বজনা বাঁকুড়া-আদ্রা রাস্তার পাশে ফেলে দেন পুরসভার সাফাইকর্মীরা। কিছু আর্বজনা ফেলা হয় শহরের মধ্যে এটিম ময়দানের পাশে। এতে পরিবেশের সঙ্গে দৃশ্য দূষণের অভিযোগ উঠলেও এ ক্ষেত্রে তাদের কার্যত কিছু করার নেই বলে দাবি পুরপ্রধানের। তবে তাঁর আশ্বাস, “পুর-এলাকায় জমি না থাকায় বাধ্য হয়ে শহরের বাইরে রাস্তার পাশে আর্বজনা ফেলতে হচ্ছে। নতুনডি পঞ্চায়েতের বুন্দলা মৌজায় ফাঁকা সরকারি জমি মিলেছে। সেই জমি পুরসভাকে হস্তান্তরিত করার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। জমি মিললেই ফের টাকা বরাদ্দ করার জন্য সুডার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।”