শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা। — আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
জাঁকিয়ে শীত পড়তেই পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু করেছে বোলপুর- শান্তিনিকেতনে। প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন। তার উপরে তিন বছর পরে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে ফিরছে পৌষমেলা। হোক না সে মেলা ‘বিকল্প’। তবু শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার মেজাজই আলাদা। সব মিলিয়ে শান্তিনিকেতনে আসার ট্রেনের টিকিট ও ঘর পাওয়ার হাহাকারের পুরনো ছবিও ফিরে এসেছে। ফলে খুশি ছোট, বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
২০১৯ সালে শেষ বার পৌষমেলা হয়েছিল পূর্বপল্লির মাঠে। এর পরে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ, বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি ও পুরসভার উদ্যোগে বোলপুর ডাকবাংলা মাঠে বিকল্প পৌষমেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু অনেকের মতে, কোথাও যেন খামতি থেকে গিয়েছিল। এ বছর আবারও পুরনো মাঠে মেলা ফিরে আসায় সকলেই খুশি। ২৪ থেকে ২৮ ডিসেম্বর—পাঁচ দিনের মেলাকে কেন্দ্র করে এ বার ব্যবসাও ভাল হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় হোটেল, হোমস্টে-তে কার্যত সব ঘর বুক হয়ে গিয়েছে। মনের মতো ঘর পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। ট্রেনের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না। আগামী দু’-তিন সপ্তাহের মধ্যে টিকিট পাওয়া মুশকিল হয়ে উঠেছে। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস-সহ একাধিক দ্রুত গতির ট্রেনেও লম্বা ওয়েটিং লিস্ট।
বোলপুরে হোটেল ব্যবসায়ী মিলন হালদার, প্রসেনজিৎ চৌধুরীরা বলেন, “গত তিন বছর ধরে মেলার মাঠে মেলা না হওয়ায় বহু পর্যটক আসেনি। তার প্রভাব হোটেল ব্যবসা থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যবসার উপরে পড়েছিল। এর মধ্যেই মেলার জন্য সমস্ত হোটেলের ঘর প্রায় বুক।’’ বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ সুব্রত ভকত, কবিগুরু হস্তশিল্প সমিতির সম্পাদক আমিনুল হুদারা বলেন, “এই মেলার জন্য মানুষ দীর্ঘ প্রতীক্ষা করেছিলেন। অবশেষে সকলের সহযোগিতায় শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লি মেলার মাঠে সেই মেলা ফিরে আশায় ভাল লাগছে। আশা করছি এ বছর সমস্ত ধরনের ব্যবসায়ীরা মেলা করে লাভের মুখ দেখবেন।’’
পর্যটকের ঢল মানে বোলপুর-শান্তিনিকতনের টোটো চালকদেরও লক্ষ্মীলাভ। এ বার ডিসেম্বরে শীতের কাঁপুনি ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে। তার হাত ধরে পর্যটকেরও ঢল নেমেছে রবি-ভূমে। টোটো চালকেরাও ভাল উপার্জন করতে পারছেন। পৌষমেলা শান্তিনিকেতনে হওয়ায় তাঁরা আরও খুশি। স্থানীয় টোটো চালক পরেশ সাহানি, রাজকুমার সাহারা বলেন, ‘‘আমরাও এই মেলার অপেক্ষায় বসে ছিলাম। অবশেষে পুরনো মেলার মাঠে মেলা হওয়ায় আমাদের রোজগার ভাল হবে বলে মনে হচ্ছে।”