রাস্তার পাশ থেকে সরে গিয়েছে মাটি। হুড়ার মধুবন এলাকায় উল্টে গেল গ্যাসের গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে গেল গ্যাসের ট্যাঙ্কার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়কের উপর হুড়া থানার মধুবন ও কুলগোড়া গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলপিজি (তরল দাহ্য গ্যাস) বোঝাই এই ট্যাঙ্কারটি হলদিয়া থেকে ঝাড়খণ্ডের টাটানগরে যাচ্ছিল। তবে চালকের আহত হওয়ার ঘটনা ছাড়া বড় কোনও বিপদ ঘটেনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই গত তিন মাসে আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই রাস্তা দিয়ে ঝাড়খণ্ড যাওয়ার পথে বিয়ার বোঝাই একটি লরি ঠিক এই জায়গাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। তার দিন দুয়েক পরে চাল বোঝাই একটি লরিও একই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। কিছুদিন আগে মুরগি বোঝাই একটি লরি ও তেল বোঝাই একটি ট্যাঙ্কার ঠিক এই জায়গাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।
স্থানীয় কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক অনন্তপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘একই জায়গায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটায় লোকে নানা জল্পনা করছে। আসলে এই জায়গায় বাঁক রয়েছে। তার উপরে রাস্তা ও পাশের জমির মধ্যে ঢাল নেই। ফলে চালক আন্দাজ করতে না পারলে গাড়ির চাকা রাস্তা থেকে হঠাৎ অনেকটা নীচে মাটিতে পড়ে বেসামাল হয়ে পড়ছে। তাতেই দুর্ঘটনা ঘটছে। রাতে তো বটেই, দিনের বেলাতেও দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ বাসিন্দাদের একাংশের মতে, রাস্তার পাশে ঢাল না করলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাই এ দিকে তাঁরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। এলপিজি বোঝাই দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির চালক মহম্মদ হাবিব বলেন, ‘‘উল্টোদিক থেকে আসা একটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে রাস্তা থেকে গাড়ির এক পাশ নামিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরেই আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি উল্টে গেল।’’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ট্যাঙ্কারটি উল্টে গেলেও বুধবার দুপুর অবধি তা তোলা যায়নি। ফলে এই সড়কে যান চলাচলে প্রভাব পড়ে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার এই সড়কেই হুড়া থানা এলাকার পড়াশিয়া গ্রামের অদূরে বোকারো থেকে অসমের কামরূপ যাওয়ার পথে রাসায়নিক বোঝাই অন্য একটি ট্যাঙ্কার উল্টে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই ট্যাঙ্কার থেকে তরল রাসায়নিক গড়িয়ে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়ায়। তাতে আতঙ্ক ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দা সনৎকুমার গোপ, তাপস কুমার গোপ বলেন, ‘‘গ্যাসের ঝাঁঝে কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের আশঙ্কা এই তরল এলাকার কোন ক্ষতি করবে না তো?’’ ট্যাঙ্কারের চালক মুকেশ যাদব অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘গন্ধটা ঝাঁঝালো হলেও ক্ষতি করবে না।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য বাঁকের এই জায়গাগুলিতে রাস্তার পাশে সতর্কবার্তা সূচক ফলক লাগানোর দাবি তুলেছেন। জাতীয় সড়ক বিভাগের নিবার্হী বাস্তকার সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের কাছে খবর নেই। সতর্কবার্তা সূচক ফলক লাগানোর বিষয়টি আমরা দেখছি। আর রাস্তার পাশ থেকে মাটি সরে গিয়েছে কিনা তাও দেখা হবে।’’