লাগাতার বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে নাকাল জেলা
Birbhum Power Outage

সদরে ভাঙচুরের নালিশ বণ্টন সংস্থার অফিসে

অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকার ট্রান্সফর্মার পুরনো। সেগুলি ‘লোড’ নিতে পারছে না। ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণও করছে না বিদ্যুৎ দফতর। যার ফলে ভোগান্তি বাড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বীরভূম শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৩
Share:

ভরসা যখন হাতপাখা। শনিবার দুপুরে নলহাটির ভদ্রপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের হাত থেকে রেহাই কবে? এই প্রশ্ন এখন তামাম বীরভূমবাসীর।ঘনঘন লোডশেডিং হওয়ায় নাজেহাল জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন। শুক্রবার রাতেও সিউড়ি, রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারই, দুবরাজপুর সহ বিভিন্ন এলাকা অন্ধকারে ডুবে ছিল দীর্ঘক্ষণ।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার উপরে। শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ সিউড়ির সোনাতোড়পাড়ায়, বণ্টন সংস্থার সিউড়ি পূর্ব কার্যালয়ে ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ। কার্যালয়ের এক কর্মী অষ্টম গড়াইয়ের দাবি, একটি নজর ক্যামেরা ভাঙা হয়েছে, পাশাপাশি বোর্ডে ঢিল ছোড়া, অফিসের নাম লেখা বোর্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা, লাঠি ও রড দিয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা করা করা হয়েছে। ওই সময়ে শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। বণ্টন সংস্থার এক আধিকারিক জানান, এই লোডশেডিং শুধু বীরভূম নয়, রাজ্য জুড়েই হচ্ছে। এতে তাঁদের কিছু করার নেই। কিন্তু, ভাঙচুরের ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

পাল্টা গ্রাহকদের প্রশ্ন, নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুতের বিল দিয়েও ভাদ্র মাসের এই পচা গরমে কেন এত ঘনঘন লোডশেডিং হবে? বিশেষ করে শুধু রাত নয়, জেলার বেশ কিছু জায়গায় প্রায় রোজই দুপুরে ও সন্ধ্যার দিকেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন শিশু থেকে বয়স্করা। লোডশেডিং হওয়ায় অনেকেই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে। তবে, সূত্রের খবর, লোডশেডিংয়ের জ্বালা টের পাচ্ছেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী ও আধিকারিকেরাও। তাঁদের বাড়িতেও প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলছেন, ‘‘সকাল সকাল উঠে প্রথম কাজ হল, পাম্প চালিয়ে ট্যাঙ্ক ভরে নেওয়া। কারণ, আমরাও বুঝতে পারছি না, কখন লোডশেডিং হবে!’’ তাঁর দাবি, ‘‘কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য। তার পরেও কোথাও কোথাও সমস্যা হচ্ছে।’’

Advertisement

অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকার ট্রান্সফর্মার পুরনো। সেগুলি ‘লোড’ নিতে পারছে না। ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণও করছে না বিদ্যুৎ দফতর। যার ফলে ভোগান্তি বাড়ছে। যেমন, শুক্রবার রাতেই মুরারই ১ ব্লক অফিস সংলগ্ন এলাকায় একটি ‘ফেজ়ে’ লাইন না থাকায় সারারাত কষ্ট পেয়েছে অনেক পরিবার। শনিবার সকালে পরিষেবা ফিরেছে।

এ দিন সকাল থেকে সমাজমাধ্যমে বিদ্যুৎ দফতর ও বিদ্যুৎমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে অনেকে পোস্ট লিখিতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, মুরারই ও নলহাটির বিস্তীর্ণ এলাকায় গরিব খেটে খাওয়া মানুষের বাস। তাঁদের একমাত্র ভরসা পাখা ও আলো। বিদ্যুৎ না-থাকায় জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। লোহাপুরের বাসিন্দা শেখ মিরাজ, আব্দুল কাশেমরা বলেন, ‘‘বিদ্যুতের সব থেকে বেহাল অবস্থা নলহাটি ২ ব্লকে। এ বারে গরমে কষ্ট তো পেয়েইছি। তার উপরে এখনও একটু বৃষ্টি বা ঝড় হলেই এক বা দু’দিন বিদ্যুৎ থাকে না।’’

বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার মহিলা মোর্চার সভানেত্রী রেশমি দে-র দাবি, ‘‘দেউলিয়া রাজ্য সরকার অর্থের অভাবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা দিতে পারছে না। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে সোমবার থেকে আন্দোলন শুরু করবে বিজেপি।’’

বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পেয়ে এ দিন রামপুরহাটে সাংবাদিক বৈঠক করেন এলাকার বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বিদ্যুৎ দফতরের রামপুরহাটের ডিভিশনাল ম্যানেজার এবং রিজিওনাল ম্যানেজারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তবে , যথাযথ পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আশিস বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের বলেছি, কোথ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হলে এলাকায় আগাম প্রচার করতে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement