তীর্থে গিয়ে দশ মাস নিখোঁজ রয়েছেন আশি বছরের এক বৃদ্ধা। সম্প্রতি দিল্লির একটি হোমে সাঁইথিয়ার মাঠপলসা পঞ্চায়েতের হরিশকোপা গ্রামের নিয়তি মণ্ডল নামে ওই মহিলার খোঁজ পেয়েছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু, তার পরেও নিজের বাড়ি ফিরতে পারেননি নিয়তিদেবী। অত দূর থেকে মাকে নিয়ে আসার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই বৃদ্ধার তিন ছেলে সুকুমার, অসীম এবং প্রকাশ মণ্ডলদের। মাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে রাজ্য সরকারকে পাশে চাইছে ওই হতদরিদ্র পরিবার।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নিয়তিদেবীর নেশাই হল বিভিন্ন তীর্থস্থান ঘুরে বেড়ানো। বিভিন্ন তীর্থস্থান ও আশ্রমে এক-দু’মাস কাটিয়ে ফের নিজের সংসারে স্বামী- ছেলে-বৌমা-নাতি-নাতনিদের কাছে ফিরে আসতেন। কিন্তু শেষবার তীর্থে বেরিয়ে গত দশ মাস থেকে তাঁর সঙ্গে পরিবারের আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। ছোট ছেলে প্রকাশ এবং তাঁর স্ত্রী জয়াবতীদেবী বলেন, ‘‘গত প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে মা একাই তীর্থ করতে চলে যান। বাবা বা আমাদের কোনও নিষেধ শুনতেন না। লাভপুরের ফুল্লরাতলা, তারাপীঠ, দুবরাজপুর, বক্রেশ্বর থেকে কামাক্ষ্যা, পুরী, গয়া, কাশী, বৃন্দাবন, মথুরা, সর্বত্র তীর্থ করে বেরান।’’ এত তীর্থ করতে যেতেন, খরচ উঠত কী ভাবে? প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সংসারে কারও সামর্থ্য নেই যে মায়ের তীর্থের খরচ জোগাবো। মা এমনিই বেরিয়ে পড়তেন। কী ভাবে যেতেন, কী ভাবে চলতেন, তা মা-ই বলতে পারবেন। শেষবার গত ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে মা তীর্থে যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছেন।’’
ওই তীর্থে যাওয়ার দু’তিন মাস পরেও নিয়তিদেবী না ফেরায় চিন্তায় পড়েন ছেলেরা। তাঁরা জানান, তার পর থেকে কাছাকাছি বিভিন্ন আশ্রম এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে খোঁজ খবর শুরু হয়। কিন্তু, কেউ-ই নিয়তিদেবীর কোনও হদিস দিতে পারেননি। শেষমেশ থানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। কিন্তু, তার আগেই গত শুক্রবার সাঁইথিয়া থানা থেকে খবর দেওয়া হয়, নিয়তিদেবী দিল্লির একটি হোমে আছেন। সেই হোমের ঠিকানাও তাঁদের দেওয়া হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাঁইথিয়া থানায় ওই বৃদ্ধার খোঁজ দেয়। ওই সংস্থার কর্মী স্বর্ণালী মিশ্র সাঁইথিয়া থানায় নিয়তিদেবী এবং তাঁর ছেলেদের নাম-ঠিকানা জানান। আমরা তার পরেই বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে স্বর্ণালিদেবী শনিবার বলেন, ‘‘আমাদের সংস্থার দিল্লির প্রধান কার্যালয় সেখানকার একটি হোমে নিয়তিদেবীর খোঁজ পায়। সেখান থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়। আমরা সাঁইথিয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করি। থানা থেকে প্রকাশবাবুদের সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দেয়।’’ তিনি জানান, এ দিনই প্রকাশবাবুরা তাঁদের মায়ের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন।
এ দিকে, প্রকাশবাবুরা বলছেন, ‘‘অত দূর থেকে মাকে নিয়ে আসার আর্থিক ও মানসিক বল, কোনওটাই আমাদের নেই। যদি সরকার এ ব্যাপারে সাহায়্য করে, তা হলে আমরা সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’’